কলকাতার আশেপাশে পিকনিকের সুলুকসন্ধান
শীতের মিঠে কড়া রোদ গায়ে মেখে ছুটির দিনে বনভোজন যেন এক অনাবিল আনন্দ। চড়ুইভাতির সেই পুরনো ছবি এখন অবশ্য দেখা যায় না। তবে নিত্যনতুন গড়ে ওঠা পিকনিক স্পটের পাশাপাশি বেশ কিছু জনপ্রিয় পিকনিকের স্থান এখনও আকর্ষণ করে সকলকে। রইল কাছে দূরের সেই সমস্ত পিকনিক স্পটের হদিশ।
কঙ্কণা
গোবরডাঙা স্টেশনের কাছে অল্প পরিচিত এই পিকনিক স্পট। নামটি পরিচিত নদীর নামে। গোবরডাঙা স্টেশন রোড ধরে পূর্ব দিকে কয়েক কিমি এগোলেই ইছামতীর উপনদী যমুনার দিকে চোখ যায়। যমুনা এখানে বারংবার গতির দিক বদলে বানিয়ে তুলেছে ঘোড়ার খুরের আকৃতির হ্রদ। স্থানীয়রা এটিকে বাঁওড় বলে। শীতকালে এই বাঁওড়ের পাশেই বসে পিকনিক।
সবুজ জলে নীল মিশ্রিত কঙ্কণার পিকনিকের আনন্দের পাশাপাশি কোনওরকম স্পট বুকিংয়ের সমস্যা নেই। পছন্দসই জায়গা বেছে বসে পড়ুন। আনাজপাতি চাইলে গোবরডাঙা বাজার থেকেই কিনতে পারেন। পিকনিকের ফাঁকে ঘুরে আসতে পারেন আশপাশের গ্রাম থেকে। মাছের ভেড়ি, মাটির ঘর, জেলে নৌকায় সাজানো গ্রামীণ জনপদ আপনার মনকে ভরিয়ে তুলবে। শীতের সময় পরিযায়ী পাখিরা এসে ভিড় করে বাঁওড়ের চারপাশে মন চাইলে জেলেনৌকায় সওয়ারি হয়ে কঙ্কণার বুকে ঘুরতেই পারেন।
কীভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে বনগাঁগামী ট্রেনে চেপে গোবরডাঙা স্টেশনে নেমে ভ্যানরিকশা ধরে তাতে মালপত্র চাপিয়ে ১ কিমি দূরে মেদিয়া পথ গ্রামে চলে আসুন। এই গ্রামকে ঘিরেই রয়েছে ছোট্ট নদী কঙ্কণা।
একান্ত আপন
মধ্যমগ্রাম স্টেশনের সন্নিকটে অবস্থিত বাদুতে চড়ুইভাতির আদর্শ ঠিকানা একান্ত আপন। এক বিঘা জমির উপর মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এই পিকনিক স্পটটিতে রয়েছে আমোদপ্রমোদের নানাবিধ আয়োজন। বাচ্চাদের খেলাধুলোর জন্য রয়েছে দোলনাসহ নানা জায়গা। রান্না করার জন্য এখানে আলাদা ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে একসঙ্গে ১০০ জন চড়ুইভাতি করতে পারেন। একদিনে একটিমাত্র দলকেই পিকনিক করার অনুমতি দেওয়া হয়। ভাড়া পড়বে ৭,০০০টাকা।
কীভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে করে এলে নামতে হবে মধ্যমগ্রাম স্টেশনে। শিয়ালদহ-বারাসত শাখার অন্যতম স্টেশন মধ্যমগ্রাম। সেক্ষেত্রে শিয়ালদহ থেকে ধরতে পারেন মধ্যমগ্রাম, বারাসাত, বনগাঁ, হাবড়া, গোবরডাঙা, হাসনাবাদ বা দত্তপুকুর লোকাল। মধ্যমগ্রাম স্টেশনে নেমে বাদুগামী পথ ধরে ভ্যান বা রিকশায় পৌঁছে যান পিকনিক স্পটে। আর গাড়িতে করে এলে ভিআইপি রোড, যশোর রোড হয়ে মধ্যমগ্রাম চৌমাথা পৌঁছে বাদুগামী রাস্তা ধরতে হবে।
সংহতি পার্ক
অশোকনগর-কল্যাণগড় পরিচালিত অন্যতম পিকনিক স্পট সংহতি পার্ক। ১০ বিঘে জমি আর জলাশয় নিয়ে গড়ে উঠেছে এই জায়গাটি। এখানে চারিধারে নারকেল, সুপারি গাছের ছায়া। রয়েছে ফুলের বাগান, জলাশয়, জলবিহারের জন্য বোটিং, রোপওয়ে, ভুতুড়ে বৃষ্টি, ওয়ান্ডার হাউস, কৃত্রিম পাহাড়ি বনভূমি, ঝরনা সহ শিশুদের মনোরঞ্জনের কার রাইডিং, টয়ট্রেন, মিকি মাউসের মতো মজাদার আইটেম। পার্কের প্রবেশ মূল্য বড়দের ক্ষেত্রে ১০টাকা এবং ছোটদের ৫টাকা।
পার্কটি খোলা থাকে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত, সোমবার বাদে। সপ্তাহের অন্যান্য দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। পার্কের অন্দরেই রয়েছে পিকনিকের ব্যবস্থা। ২৫ জনের দলের ক্ষেত্রে স্পট পিছু ভাড়া পড়বে ৭০০ টাকা। রান্নার যাবতীয় সরঞ্জাম পাবেন অশোকনগর স্টেশন রোড বাজারে। রান্না-খাওয়ার ফাঁকে সময় করে ভ্যান রিকশায় চেপে দেখে নিতে পারেন কাঠিয়াবাবার আশ্রম আর ফেরার পথে সময় করে দেখে নিতে পারেন বাবা লোকনাথের জন্মভিটে চাকলাধাম।
কীভাবে যাবেন: ট্রেনে এলে শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ বা হাবড়া লোকালে চেপে নামতে হবে অশোকনগর স্টেশনে। স্টেশনে নেমে অটো, ভ্যানরিকশা বা রিকশায় চেপে এই পার্কে আসা যায়। গাড়িতে এলে উত্তর বারাসত হয়ে যশোর রোড ধরে অশোকনগর বিল্ডিং মোড় পেরিয়ে পৌঁছতে পারেন সংহতি পার্কে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।