গ্যাসের বাড়তি দামে নেই ভর্তুকি
১২ দিনের মাথায় ফের ৫০ টাকা দাম বাড়ল রান্নার গ্যাসের (Cooking Gas)। ফলে ডিসেম্বরেই রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার প্রতি দাম বাড়ল মোট ১০০ টাকা। ২ ডিসেম্বর রান্নার গ্যাসের দাম ৫০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৭০ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার ১৪.২ কেজি সিলিন্ডারের বাজারদর বেড়ে হল ৭২০ টাকা ৫০ পয়সা। গভীর রাতে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। তবে এই নজিরবিহীন ও হঠকারী সিদ্ধান্তের কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে ১৯ কেজি বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম ৩৬ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। আগের বার দাম বাড়লেও ডিসেম্বরে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ভর্তুকি বাবদ জমা পড়েছে ১৯ টাকা ৫৭ পয়সা। অক্টোবর এবং নভেম্বরেও ভর্তুকির অঙ্কটা একই ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক মাসের শেষ দিনে নতুন দাম ঘোষণা করে কেন্দ্র। এবারও করেছিল। কিন্তু নজিরবিহীনভাবে তা পরিবর্তন করা হয়। কেন? তা অবশ্য ব্যাখ্যা করেনি সরকার। যেমন ব্যাখ্যা করা হয়নি নভেম্বরে বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম বাড়লেও রান্নার গ্যাসের দর অপরিবর্তিত থাকার বিষয়টিও।
বিশেষজ্ঞ এবং ডিলারদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত মাসে বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় বিহারে বিধানসভা ভোট থাকায় গৃহস্থের সিলিন্ডারে তা কার্যকর করার সাহস দেখায়নি সরকার। সেক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকত। ফলে ভোট মিটতেই দাম বাড়ানো হল। কিন্তু ভর্তুকির এই হাল কেন? দীর্ঘদিন ধরেই ন্যায্য টাকা না মেলার অভিযোগ উঠছে। তবে গত দু’মাস ধরে রান্নার গ্যাসের দাম না বাড়ায় সেদিকে নজর পড়েনি গৃহস্থের। সাধারণ হিসেব বলছে, সিলিন্ডারের দাম ৫০ টাকা বাড়লে ভর্তুকিও (Subsidy) ৫০ টাকা বেশি মিলবে। কিন্তু গত ১৩ ডিসেম্বর ডেলিভারি পাওয়া রান্নার গ্যাসের জন্য গৃহস্থের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে আগের মাসের মতোই ১৯ টাকা ৫৭ পয়সা। এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ভর্তুকি নির্ধারণের অঙ্কটা ঠিক কী?
কয়েক বছর আগেও এমন সমস্যা হয়নি। তখন প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা এবং সাধারণ গ্রাহকের ভর্তুকির পরিমাণও এক ছিল। ক্যাশমেমোয় তার অঙ্কটাও লেখা থাকত। কিন্তু আচমকা উজ্জ্বলা যোজনার চেয়ে সাধারণ গ্রাহকের ভর্তুকি ২০ টাকা কমিয়ে দেয় সরকার। আর সেই মাস থেকেই ক্যাশমেমোয় ভর্তুকির অঙ্কটাও উধাও হয়ে যায়। শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখেই গ্রাহক তা জানতে পারবেন। এরপরই ক্রমাগত প্রতি মাসে গ্যাসের দাম অনুযায়ী যা ভর্তুকি, তার থেকে ৫-৭ টাকা কম আসতে শুরু করে। তা হওয়ার কথা নয়! কোনও সরকারি ঘোষণাও নেই। আবার গ্রাহকের পক্ষেও বারবার অ্যাকাউন্টে টাকা আসার হিসেব করা সম্ভব নয়। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েই ভর্তুকি কমানো শুরু হয় বলে অভিযোগ। এমনকী উজ্জ্বলা যোজনায় ২০ টাকার তফাৎও তুলে দেয় সরকার। কেন্দ্র জানিয়েছে, ভর্তুকি তোলা হবে না। প্রতিশ্রুতি আর কাজে ফারাকটা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে।