পেটপুজো বিভাগে ফিরে যান

মিষ্টির দোকান মাতাচ্ছে নতুন গুড়ের রসগোল্লা

December 18, 2020 | 2 min read

সারা বছর কাচের শো-কেস আলো করে থাকে রোজ-স্ট্রবেরি-চকোলেট সন্দেশ। রংয়ের ফোয়ারা ছোটায় কমলাভোগ, ক্ষীরমোহন, দরবেশও। কিন্তু এখন শীতকাল। শো-কেসে অন্তত তিন মাস তারা কোণঠাসা। মিষ্টি-রসিক বাঙালির জিভ মজেছে গুড়ের স্বাদ ও গন্ধে। নতুন গুড়ের কাঁচাগোল্লা এখন দোকানের রেকাবে রেকাবে। টলটলে সোনালি রসে হাবুডুবু খাচ্ছে লালচে রসগোল্লা। এমনকী অমৃত কলসও ভরে উঠেছে মধু নয়, নলেন গুড়ে।
ভরবে নাই বা কেন? শীত যে বড় চঞ্চল। আসতে না আসতেই ফুরিয়ে যায়। তা নিয়ে বাঙালির আক্ষেপ অবশ্য কম নয়। তার চেয়েও বোধহয় বেশি হা-হুতাশ থাকে ওই মিষ্টিগুলোর জন্যই। তাই শীতের ‘ওম’ মাখা গুড়ের রসগোল্লা-সন্দেশ বঙ্গবাসীর মুখে তুলে দিতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেন না মিষ্টান্ন বিক্রেতারা। এবারও রীতিমতো আয়োজন করে পসরা সাজাচ্ছেন তাঁরা। পাশে দাঁড়িয়েছে ‘মিষ্টি উদ্যোগ’।

দুগ্গাঠাকুর জলে পড়লেই নতুন গুড়ের রসগোল্লার (Rasgulla) জন্য মন কেমন শুরু হয়। সেই পৌষ পর্যন্ত। তারপর একদিন দুম করে গ্রামে ঢুকে পড়ে সেই চেনা-পরিচিত সুবাস। কাকভোরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে মাখামাখি হয়ে যায় ফুটন্ত খেজুর রসের ঘ্রাণ। আগুনের আঁচে অ্যালুমিনিয়ামের শালতিতে ঢালা রসে সোনালি রং ধরে। পাত্র নামলেই পাতলা গুড়ে মাত হয় গোটা পাড়া। কে সি দাশের কর্ণধার তথা বাংলার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন ‘মিষ্টি উদ্যোগ’-এর সভাপতি ধীমান দাশের কথায়, ‘গুড়ের ব্যাপারে আমরা বরাবরই খুব খুঁতখুঁতে। আমার দাদু সারদাচরণ দাশ নিজে বাজার ঘুরে গুড় চেখে বেড়াতেন। তার পরই ঠিক করতেন কোন গুড় আনবেন।

সেই রেওয়াজ আজও রয়েছে। আমি নিজে একসময় নাগরি চেখে গুড় কিনেছি। একটা নাগরির গুড় ভালো মানেই সেই ব্যবসায়ীর থেকে বাকি গুড় কিনব,
এমনটা কিন্তু নয়। প্রতিটি কলসির গুড়কে পরখ করে দেখা হয় এখনও।’ ফলে কে সি দাশের মিষ্টির ভাঁড়ারে এখন ‘সুপারহিট’ গুড়ের রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা, রসমালাই
এবং রাবড়ি।

বাংলায় মিষ্টির দোকানের সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। বাঙালিকে রসগোল্লা-সন্দেশ খাইয়ে বহু মানুষের উপার্জন ও কর্মসংস্থান। অথচ সেই শিল্পের সর্বনাশ করার জন্য কম চক্রান্ত হয়নি। মিষ্টির আয়ু ক্রেতাকে জানানো থেকে শুরু করে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, এমনই অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এমনকী বাংলার মিষ্টির নিজস্ব স্বাদ ও ঐতিহ্য বদলানোর চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও চিরন্তনী স্বাদকে বদলানো যায়নি—বলছেন ‘মিষ্টি উদ্যোগ’-এর যুগ্ম সম্পাদক এবং ‘মিঠাই’-এর কর্ণধার নীলাঞ্জন ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘নতুন গুড়ের রসগোল্লা বা সন্দেশের তৃপ্তি বাঙালিকে অন্য কিছু দিতে পারবে না। আমরা নতুন গুড়ের বেকড রসগোল্লা বা দই বানাচ্ছি, এটুকুই যা নতুনত্ব। কিন্তু আমাদের ফিরতে হয় সেই ঐতিহ্যেই। আমরা বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আনছি পাটিসাপটা ও পিঠে-পুলি। একেবারে বাংলার নিজস্ব ঘরানায় তৈরি।’

এখন প্রশ্ন হল, কোন এলাকার নলেন গুড়ের স্বাদ অতুলনীয়? মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের মতে, নদীয়ার মাজদিয়া, বর্ধমানের কাটোয়ার খেজুর গুড় তাদের প্রথম পছন্দ। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ার পথে-প্রান্তরে যে গুড় মেলে, তারও নামডাক যথেষ্ট। কিন্তু সমস্যাও রয়েছে। খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধার লোক বা ‘শিউলি’দের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। গ্রামে বিকল্প আয়ের একাধিক রাস্তা খুলে যাওয়ায় তাদের নতুন প্রজন্ম আর এই পেশায় আসতে চাইছেন না। তার প্রভাব পড়ছে বাংলার মিষ্টি শিল্পে। তার উপর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। এসবের মোকাবিলায় সরকারি হস্তক্ষেপ চাইছে ‘মিষ্টি উদ্যোগ’। সংগঠনের দাবি, সরকারের তরফে এমন কোনও নীতি বা প্রকল্প আনা হোক, যাতে উৎসাহ পান ‘শিউলি’রা। তা হলে উৎপাদন বাড়বে খেজুর রসের। ঐতিহ্য আঁকড়ে বাঁচবে বাংলার মিষ্টান্ন শিল্প।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#sweet shops, #Nalen Gurer Rasgolla

আরো দেখুন