বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

লেসলি ক্লডিয়াস – ভারতীয় হকির চড়ুইপাখি

December 20, 2020 | 2 min read

ধ্যানচাঁদ তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘হকির চড়ুইপাখি’। একটি কথা চালু ছিল তখন। হকিমাঠে বল যেদিকে, পাখির মতন সেখানেই পৌঁছে যেতেন তিনি। যেন ঠিক চড়ুইপাখি। ফুড়ুৎ-ফুড়ুৎ করে মাঠের সর্বত্র বিরাজ করতেন। তিনি, লেসলি ওয়াল্টার ক্লডিয়াস। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা একজন হকি খেলোয়াড়। সেই সময় ভারতীয় হকি দলের একজন প্রধান নির্বাচক বলেছিলেন, ‘ক্লডিয়াস নিজেই নিজেকে জাতীয় দলে নির্বাচিত করেছে। এবার বাকি দলটা বাছতে হবে আমাকে।’ 

আজ তাঁর মৃত্যুদিন। ২০১২ সালে ২০ ডিসেম্বর ৮৫ বছর বয়সে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। ১৯২৭ সালে ২৫ মার্চ জন্মানো হকির এই কিংবদন্তির সঙ্গে নড়ির যোগ ছিল কলকাতা তথা বাংলার। ছোটবেলায় বিলাসপুরে মামার বাড়ি থেকে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। আর হ্যাঁ, খড়গপুরে তিনি এসেছিলেন ১৯৪৫ সালে। ১৮ বছর বয়সে। খড়গপুরে শের শাহ স্টেডিয়ামে ছিল তাঁর বেড়ে ওঠা।

১৯৪৬ সাল। জাতীয় হকিতে বেঙ্গল নাগপুর রেলের দু’টো দল খেলত তখন। বেটন কাপের আগে সেই দুই দলের মধ্যে অনুশীলন ম্যাচ চলছে। দুই দলে শোভাবর্ধন করছেন ১৯৩৬ সালের অলিম্পিকে ভারতীয় হকি দলের দুই তারকা জো গ্যালিবার্ডি এবং ডিকি কার। আর ক্লডিয়াস মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে দেখছেন সেই খেলা। তখন ফুটবলটা চুটিয়ে খেলেন ‘চুড়ুইপাখি’। 

হঠাৎ একজন তাঁকে বললেন, ‘একজন খেলোয়াড় কম পড়েছে আমাদের দলে। তুমি একটু খেলে দেবে আমাদের দলে?’ উল্লেখ্য যে, অসুস্থ থাকায় সেদিন মাঠে আসতে পারেননি নির্ভরযোগ্য সেন্টার হাফ ল্যাম্বি ডেভিড। এরপর হকি স্টিক হাতে নেমেছিলেন ক্লডিয়াস। সেই খেলা দেখে গ্যালিবার্ডি ও ডিকি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলেন, ‘ফুটবলটা ছেড়ে শুধু হকিতে মনোনিবেশ করো। হকিই তোমার খেলা।’

ঠিকই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ‘৩৬ অলিম্পিকের দুই তারকা। কারণ অলিম্পিকে বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনটে সোনা এবং একটা রুপোর পদক জেতার রেকর্ড আছে ক্লডিয়াসের নামেই। তাছাড়াও টানা চারটে অলিম্পিক থেকে হকিতে পদক জেতাটা আজও বিশ্বরেকর্ড। উল্লেখ্য যে, ১৯৪৮, ১৯৫২ ও ১৯৫৬ সালের অলিম্পিকে জিতেছেন সোনা। ১৯৬০-এর অলিম্পিকে রুপো। রুপো যেতেন অধিনায়ক হিসেবে। 

তাঁর নাম আছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও। তাঁর চাকরিজীবন কেটেছে ক্যালকাটা কাস্টমসে। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ক্যালকাটা কাস্টমসের হয়ে খেলেছেন দাপটের সঙ্গে। অবসরের পরেও লেসলি ময়দান থেকে সরে যাননি। যুক্ত ছিলেন ক্রীড়া প্রশাসনের নানাবিধ কাজে। ছিলেন কলকাতা ভেটারেন্স স্পোর্টস ক্লাবের সভাপতিও। ময়দানে হকির আসর বসলেই দেখা মিলত ধোপদুরস্ত লেসলির। 

এরপর ১৯৭১ সালে তিনি ‘পদ্মশ্রী’ পান। ১৯৭৪ ও ‘৭৮ সালে তিনি ভারতীয় দলের ম্যানেজার হন। কিছু সময়ের জন্য জাতীয় দলের নির্বাচকও হন (১৯৭৭-৮০)। স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছিলেন সেই পদও। আসলে শত পুরস্কার, শত পদ দিলেই এমন একজন মানুষকে সম্মানে ভূষিত করা যায় না। হয়তো শেষ জীবন পর্যন্ত আরও একটু ভালোবাসা আশা করেছিলেন এই ভারতীয় কিংবদন্তি। কিন্তু আশাই সার। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি কাটিয়েছিলেন কলকাতার অ্যাংলো পাড়ার ভাড়াবাড়িতে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Leslie Claudius

আরো দেখুন