‘ট্রাম ওয়ার্ল্ড কলকাতা’ – নস্টালজিয়া আর আড্ডায় জমে উঠুক শীতকাল
শীতের ওম গায়ে মেখে চড়ুইভাতিতে মন মজছে শহরবাসীর। কিন্তু করোনা জুজুর ভয়ে ইতিউতি যাওয়া মানা। শহরের বাইরে পা রাখতেও বুক দুরুদুরু। অগত্যা শহরের চারিপাশেই ঘুরে ফেরা। চিড়িয়াখানা টু মিলেনিয়াম পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন টু ভিক্টোরিয়া সবই তো চষে ফেলা হয়েছে। তাহলে, এই মরসুমের বাকি দিনগুলোয় কোথায় যাওয়া যায়?
ফিকর নট। ২৩ ডিসেম্বর থেকে শহরবাসীর মন কাড়তে বালিগঞ্জের কাছে গড়িয়াহাট ট্রাম ডিপোতে চালু হচ্ছে ট্রাম ওয়ার্ল্ড কলকাতা (Tram World Kolkata)। যেখানে নস্ট্যালজিয়ার গন্ধ নিতে নিতে জমে যাবে আড্ডা আর খানাপিনা। ভাগ্য ভাল থাকলে সুন্দর একটা কনসার্টও শোনা যেতে পারে। শুনেই বেশ লাগছে, তাই তো? মনে হচ্ছে এই নতুন ডেস্টিনেশনটা আসলে কী?
পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের তরফে জানানো হচ্ছে, শুধু কলকাতা নয়, গোটা বিশ্বের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ট্রাম স্থান পাচ্ছে এই ট্রাম ওয়ার্ল্ডে। পুরনো লজঝড়ে ট্রামগুলোকে ভাঙাচোরা লোহার দোকানে না পাঠিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে গড়িয়াহাট ডিপোয়। তাঁদের খোলনলচে বদলে রঙ্-তুলি শিল্পের ছোঁয়ায় দেওয়া হচ্ছে নতুন প্রাণ। সাজিয়ে তোলা হচ্ছে ঐতিহ্যের ছোঁয়ায়। যেখানে পুরনো ট্রামের নস্ট্যালজিয়া রোমন্থন করতে করতে প্রিয়জনের সঙ্গে হারিয়ে যেতে পারবেন ফেলে আসা দিনগুলোয়।
এটাকে শুধুমাত্র ট্রাম সংগ্রহশালা বলতে একবারে নারাজ পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান রচপাল সিং এবং এমডি রজনবীর সিং কাপুর। তাঁদের কথায়, এটা সংগ্রহশালার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এখানে থাকছে কনসার্ট প্লেস. ফুটকোর্ট, ওয়েটিং রুম, ফটো গ্যালারি-সহ আরও অনেক কিছু। ট্রামের পাশাপাশি এখানে স্থান পাচ্ছে ভিন্টেজ গাড়িও। অর্থাৎ তিনশো বছরের পুরনো শহরটার পরিবহণ ব্যবস্থার প্রায় খুঁটিনাটি জানিয়ে দেবে এই ট্রাম ওয়ার্ল্ড। ২৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধে ৬টা অবধি খোলা থাকবে এই ট্রাম ওয়ার্ল্ড কলকাতা। টিকিট মাত্র ৩০ টাকা। চাইলে ব্যক্তিগত কোনও অনুষ্ঠানের জন্য এই লনটি ভাড়াও নিতে পারেন।
কলকাতার এই অভিনব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনার নিক লো। বলেন, “কলকাতার ঐতিহ্যে নতুন পালক যোগ করবে এই ট্রাম ওয়ার্ল্ড।” একই সুর শোনা গেল টেরির ডিরেক্টর জেনারেল অজয় মাথুরের গলাতেও। পরিবহণ নিগমের এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ ও ইকোলে দ্য ইনটিউট ল্যাব। ইতিহাস বলছে, ১৮৮০ সালের ২২ ডিসেম্বর কলকাতার ট্রাম সংস্থার রেজিস্ট্রেশন চহয়। তারই ১৪০ বছর উপলক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হল।
তাহলে আর দেরি কেন, শীতের আমেজ নিয়ে একবার ঢুঁ মেরে আসুন না গড়িয়াহাট ট্রাম ডিপোয়। আর বুঁদ হন এই ক্ষয়াটে শহরের নস্ট্যালজিয়ায়।