পিঠে-পুলি-প্রণামে বড়দিন পালন বাঙালিদের
ক্রিসমাস বলতে প্রথমেই কী মনে পড়ে? গির্জার ঘণ্টা, সান্তাক্লজ, ক্রিসমাস ট্রি আর কেক। সে সব তো আছেই। বাঙালির ক্রিসমাসের একটা অংশ কিন্তু পাটিসাপ্টা, পিঠেও। বরাবরের মতো ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে বহু বাঙালি খ্রিস্টানের হেঁসেলে এ বারও তৈরি হচ্ছে চিরন্তন এই সব মিষ্টি।
কলকাতার সিআইটি রোড লাগোয়া খ্রিস্টান পাড়ায় নারকেলের পুর দিয়ে তৈরি হয় গরম গরম পাটিসাপ্টা, চাল গুঁড়ো করে ভাপা পিঠে। সিআইটি রোডের ফাতিমা চার্চ এলাকার বাসিন্দা অমূল্য ডি ক্রজের কথায়, ‘তালতলা, এন্টালিতেও পূর্ববঙ্গ থেকে আসা প্রচুর খ্রিস্টানের বাস। ক্রিসমাসের সময় তাঁদের বাড়িতে পিঠেই তৈরি হয়। কেকটা বাইরে থেকে বেক করা। আমার বাড়িতে ভাজা পিঠে, পাটিসাপ্টা তৈরি হয় প্রতিবার। এ বারও গিন্নি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।’
বঙ্গীয় খ্রিস্টিয় পরিষদের হেরোদ মল্লিকের কথায়, ‘গ্রাম বাংলার ক্রিসমাসে তো পিঠে-পাটিসাপ্টাই তৈরি হয়। আজ নয়, ছোটবেলা থেকে সেটা দেখে আসছি।’ এই যোগটা কি নবান্নের কারণে? হেরোদের বক্তব্য, ‘বাঙালি জীবনে কেক নতুন সংযোজন। তার আগেও তো ক্রিসমাস পালিত হত। সেখানে বাঙালি জীবনে শীতকালের মিষ্টি মানে ভাপা পিঠে, পাটিসাপ্টা, ভাজা পিঠে।’
২৫ ডিসেম্বরের চারটি রবিবার আগে থেকেই শুরু হয় উৎসবের প্রস্তুতি বা ‘অ্যাডভেন্ট সিজন’। প্রস্তুতি চলে মূলত দু’রকমের। এক বাহ্যিক – কেকের প্রস্তুতি, ঘর পরিষ্কার, নতুন জামাকাপড় কেনা, এই সব! আর একটা অন্তরের প্রস্তুতি।
সিআইটি রোড লাগোয়া ক্যাথলিক চার্চ, ফাতিমা চার্চের প্যারিস প্রিস্ট ফাদার মুকুল মণ্ডলের কথায়, ‘এই চার রবিবার আমরা অনুতাপ, আশা, আনন্দ এবং বিশ্বাসের উপরে নির্ভর করে প্রার্থনা করি। এই সময়ে কেউ চাইলে স্বীকারোক্তিও করতে পারেন। এ ভাবে অন্তরের প্রস্তুতি চলে।’
দিন দশেক আগে শুরু হয় ক্যারলের তোড়জোড়। প্রত্যেক চার্চের ক্যারলের দল ঘুরে বেড়ায় খ্রিস্টানদের বাড়ি বাড়ি। বন্ডেল গেট লাগোয়া খ্রিস্টান পাড়ার বাসিন্দা প্রোটেস্ট্যান্ট শুভদীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘গৃহস্থরা ক্যারলের দলকে বাড়ির ভিতরে আমন্ত্রণ জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন। সব শেষে ওই দলের হাতে কিছু উপহার তুলে দেওয়া হয়।’
পাশাপাশি বিজয়া, নববর্ষের মতো গুরুজনের প্রণাম নেওয়ার চলও প্রচলিত বাঙালিদের ক্রিসমাসে। ফাদার মুকুলের কথায়, ‘আমরা তো প্রথমে বাঙালি। যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। তাই ক্রিসমাস মাসের পরে এখনও অনেক বাঙালি খ্রিস্টান পরিবারের ছোটরা পরিবার ও পড়শি গুরুজনদের প্রণাম করে।’
পাশাপাশি এই সময়টায় নবান্নের ধাঁচে অনুষ্ঠান পালন করেন বাঙালি খ্রিস্টানরাও। প্রোটেস্ট্যান্ট সুবীর সরকারের কথায়, ‘হারভেস্ট সানডে বলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নতুন ফসলের উৎসব হয় আমাদের। সেখানে ঈশ্বরকে নতুন সব্জি, ফল, ডিম উৎসর্গ করা হয়। সেই দিন থেকে শুরু হয় ক্রিসমাসের যাবতীয় প্রস্তুতি।’