গ্রামীণ রাস্তা তৈরিতে বর্জ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করবে রাজ্য
ঝড় জল রোদে নষ্ট হয় না। আগুনে পোড়ালে জন্ম দেয় মারাত্মক দূষণের। সেই প্লাস্টিকের সঙ্গে বিটুমিন মিশিয়ে পরিবেশবান্ধব গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করতে নামছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর। তারা জানিয়েছে, ইতিমধ্যে এই ধরনের তিনটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আরও তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাস্তা তৈরিতে বিটুমিনের খরচ কমাতে বাতিল প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে উত্তর ২৪ পরগনা এবং মালদহে প্লাস্টিক দিয়ে তিনটি রাস্তা তৈরি করেছে পঞ্চায়েত দপ্তর (Panchayat Department)। তাতে রাস্তা তৈরির খরচ কমেছে এবং রাস্তাগুলিও টেকসই হয়েছে বলে মনে করছেন ইঞ্জিনিয়াররা। ভবিষ্যতে বাতিল প্লাস্টিক দিয়ে আরও বেশি সংখ্যক রাস্তা তৈরি করা হবে। এর জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের দাম পড়ছে কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। প্রতি কিমি রাস্তায় প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে ৩২৮ কেজি। বিটুমিনের দাম প্রতি কেজি ৪৫ টাকা এবং প্রতি কিমিতে লাগছে ৫.৪৮ টন।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসেবে, সারা দেশে প্রতি দিন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয় ১৫ হাজার টন। তার মাত্র ২০ শতাংশ নষ্ট করে ফেলা সম্ভব হয়। ওই ‘অক্ষয়’ প্লাস্টিককে রাস্তা তৈরির কাজে লাগাতে ২০১৬ সাল থেকে সব রাজ্যকে অনুরোধ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই আর্জি মেনে দিল্লির সড়ক গবেষণা কেন্দ্রের নজরদারিতে পরের বছরে পাঁচ হাজার টন বর্জ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করে এক হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছে মহারাষ্ট্র। ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস প্লাস্টিক দিয়ে রাস্তা তৈরির জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করে। সেটা মেনেই রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও।
বর্জ্য প্লাস্টিককে কুচি কুচি করে কেটে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম বিটুমিনের সঙ্গে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ রাস্তায় ঢাললে বর্ষায় জল চুঁইয়ে ভিতরে ঢোকার বিপদ অনেকটাই কমে। পাশাপাশি অনেকটাই দূর হয় রাস্তার ভিতরের অংশে বিটুমিনে ফাটল ধরার প্রবণতা। এর ফলে রাস্তা হবে একইসঙ্গে মজবুত এবং পরিবেশ-বান্ধব। বৃষ্টির জল থেকে রাস্তার যে ক্ষতি হয়, তার থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এসব রাস্তার পারফরম্যান্স বিচার করবে শিবপুরের আইআইইএসটি।
প্লাস্টিকের (Plastic) ক্যারিব্যাগ, বিস্কুট ও চিপসের মোড়কে শহরের অধিকাংশ নর্দমা ভরে গিয়েছে। তার ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হচ্ছে বহু এলাকা। প্লাস্টিক খেয়ে কিছু গবাদি পশুর মৃত্যুও হয়েছে। বারবার সচেতন করেও কমানো যায়নি এর ব্যবহার। কিছু পুরসভা নিজেদের এলাকায় ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেও প্লাস্টিক বর্জ্যে লাগাম টানা যায়নি। জঞ্জাল অপসারণ ব্যবস্থাপনায় প্লাস্টিক নিয়ে চিন্তিত পুর-নগোরন্নয়ন দপ্তর। দূষণ কমাতে রাজ্য সরকার এবার দূষণের এই শত্রুকেই রাস্তা নির্মাণের কাজে লাগাতে চাইছে। এতে বিটুমিনের খরচেও কিছুটা সাশ্রয় হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রাজ্যে ১৫ হাজার কিমি রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। যার মধ্যে ৮ হাজার কিমি তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাকি রাস্তাগুলি তৈরির কাজে বর্জ্য প্লাস্টিক ব্যবহার হলে খরচও সার্বিকভাবে কমে যাবে বলেই রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর মনে করছে।