রান্নার গ্যাস নিয়ে চরম সঙ্কটে মধ্যবিত্ত
রান্নার গ্যাস নিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম সঙ্কটে ফেলেছে কেন্দ্র। নভেম্বরে না বাড়লেও চলতি মাসে দু’বার রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে মোদি সরকার। তাতে ১৪.২ কেজি সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। গত মাসে সাধারণ মানুষ ভর্তুকি বাবদ পেয়েছিলেন সাড়ে ১৯ টাকা। এখন ১০০ টাকা দাম বেড়ে যাওয়ায়, হিসেব মতো ভর্তুকির অঙ্ক হওয়া উচিত ছিল ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ সাধারণ গ্রাহক এখনও পাচ্ছেন সেই সাড়ে ১৯ টাকাই। অর্থাৎ মানুষের সংসারের নিরিখে দেখলে, গত এক মাসে ভর্তুকি কমেছে ১০০ টাকা। লকডাউনের সময়, অর্থাৎ এপ্রিল মাসে রান্নার গ্যাস বাবদ সাধারণ মানুষ ভর্তুকি পেয়েছিলেন ১৮৯ টাকা ৫০ পয়সা। তখন থেকেই করোনা সংক্রমণ ক্রমশ আর্থিক সঙ্কটের দিকে নিয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষকে। অথচ এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত আম আদমির সিলিন্ডার পিছু কম পেলেন ১৭০ টাকা।
২০১৪ সালে ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সেবার লোকসভা ভোটের মূল ইস্যু ছিল মূল্যবৃদ্ধি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি সেবারের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম উপকরণ ছিল রান্নার গ্যাস। সেই সময়ে, অর্থাৎ ২০১৪ সালের মে মাসে সাধারণ মানুষ তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি বাবদ পেয়েছিলেন ৫১৪ টাকা। সেই সময় ভর্তুকিযুক্ত রান্না গ্যাসের দাম ছিল ৪১৪ টাকা। এর সঙ্গে তুল্যমূল্য আলোচনা করলে দেখা যাবে, এখন ভর্তুকিযুক্ত রান্না গ্যাসের দাম প্রায় ৭০০ টাকা। আর মানুষ ভর্তুকি পাচ্ছেন মাত্র কুড়ি টাকার মতো!
কেন সাধারণ মানুষের রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি এতটা কমিয়ে দেওয়া হল, সে ব্যাপারে অবশ্য টুঁ শব্দটি করছে না কেন্দ্রীয় সরকার। সিলিন্ডার পিছু সাড়ে ১৯ টাকা ভর্তুকি পাওয়া মানে প্রায় বাজারদরেই গ্যাস কিনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেই দেখছেন গৃহস্থরা। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অন্যান্য মন্ত্রী, নেতা-নেত্রীরা সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে কেঁদে ভাসান। আসলে তা যে কুমিরের কান্না, তা বুঝে গিয়েছেন অনেকেই। যাঁরা উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাসের সংযোগ নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আর্থিকভাবে দুর্বল। বাস্তব সত্যটি হল, তাঁদেরও এখন বাকিদের মতো প্রায় বাজারদরেই গ্যাস কিনতে হচ্ছে। মধ্যবিত্তদের জন্য তো বটেই, কেন্দ্রীয় সরকার গরিবদের জন্যও যে একই রকম নিষ্ঠুর, তার জ্যান্ত প্রমাণ এই সিলিন্ডারের দাম।
রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি তুলে দেওয়ার ইঙ্গিত কেন্দ্রীয় সরকার দিয়ে আসছে গত কয়েক বছর ধরেই। সেই পথে হাঁটতে গিয়ে বছর কয়েক আগে সাধারণ মানুষের পাওনা ন্যায্য ভর্তুকি থেকে চার টাকা করে কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় পেট্রলিয়াম মন্ত্রক। প্রতিবার সিলিন্ডার ডেলিভারি সময় ওই টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছিল। পরে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে সেই পদক্ষেপ কয়েক মাসের জন্য বন্ধ করে কেন্দ্র। পরে ফের যখন তা চালু হয়, তখন মাসে মাসে ছয় থেকে আট টাকা করে কমতে থাকে ভর্তুকি। আবার বিহারের বিধানসভা ভোটের মুখে ফের চুপ করে ছিল তারা। ভোট মিটতেই এবার বড় কোপ পড়ল। এক মাসে ১০০ টাকা ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের রেকর্ড এখনও পর্যন্ত নেই, যার শিকার হলেন সাধারণ গ্রাহক।