ভরপুর নস্টালজিয়া নিয়ে ফিরল ফেলুদা, বাজিমাত সৃজিতের
ঘন সবুজ বনের মধ্যে দিয়ে ফুল স্পিড ছুটে চলেছে একটি সবুজ আম্বাসেডর। সামনের সিটে বসে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে এক যাত্রী ফেললেন সিগারেটের ছাই। বাকি দুই যাত্রী মগ্ন গোয়েন্দা গল্প নিয়ে।
ছোটবেলায় ফেলুদা পড়ে যারা বড় হয়েছে, তাদের কাছে এই দৃশ্য নিতান্তই চেনা। বাঙালির প্রিয় ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ ফেলুদা-তোপশে-জটায়ু। একটা সময় অবধারিতভাবে বড়দিনে ফেলুদার ছবি মুক্তি পেত। কালের নিয়মে ট্রেডিশনে ছেদ পড়ে। কিন্তু আড্ডাটাইমস আর সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherjee) এই হাত ধরে আবারও ফিরল ফেলুদা।
করোনা অতিমারীর এই বছরে যখন সারা বছরটাই হতাশার মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে, ফেলুদা ফেরত হয়ে উঠেছে এক কথায় বড়দিনের উপহার। তবে এবার পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবির বদলে ওয়েব সিরিজ। ছিন্নমস্তার অভিশাপ উপন্যাস অবলম্বনে পাঁচ এপিসোডের সিরিজ।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ক্ষুরধার লেখনি এবং অনবদ্য চরিত্র নির্বাচন অন্য মাত্রা দিয়েছে এই সিরিজকে। টোটা রায়চৌধুরিকে (Tota Roychowdhury) ফেলুদা হিসেবে নির্বাচন করা নিয়ে অনেকেই চোখ রাঙিয়েছিলেন। কিন্তু, শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে টোটা তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে মন জয় করে নিয়েছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং সব্যসাচী চক্রবর্তীর যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন টোটা। সত্যিজিতের আঁকা ফেলুদা স্কেচগুলিকে জীবন্ত করে তুলেছেন টোটা। তাকে বাঙালিয়ানা ও মগজাস্ত্র দুটোতেই শান দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন সৃজিত।
অনির্বাণ চক্রবর্তী (Anirban Chakraborty) একেন বাবুর চরিত্রে অভিনয় করে এমনিতেই বিখ্যাত। জটায়ু হিসেবে সন্তোষ দত্তের সঙ্গে তাঁর মিল প্রশ্নাতীত। তিনি অসাধারণ অভিনেতা। এই সিরিজে তাঁর অভিনয় অতুলনীয়। অনেকের ভয় থাকে জটায়ু চরিত্রকে ভাঁড় পর্যায়ে যেন পর্যবসিত না করা হয়। সেই পরীক্ষায় লেটার পেয়েছেন অনির্বাণ। ওনার কথা বলা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ – সবেতেই জটায়ু সুলভ ব্যাপারটা সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অনির্বাণ। সেই তুলনায় তোপশের চরিত্রে কল্পন দত্ত সেরকমভাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেননি।
অন্যান্যদের মধ্যে মহেশ চৌধুরীর ভূমিকায় ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, অখিলবাবুর চরিত্রে অরুণ গুহ ঠাকুরতা, কারান্ডিকারের চরিত্রে ঋষি কৌষিক, টেক্কার চরিত্রে অরিন্দম গাঙ্গুলি এবং তুরির চরিত্রে সমদর্শী দত্ত মুগ্ধ করেছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি সিরিজের আবহ সঙ্গীত মনে ধরে যায়। নিপুণ দক্ষতার সাথে প্রতিটি দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। চিত্রনাট্যে মুন্সিয়ানার ছাপ বিগত সব ফেলুদার ছবিকে ছাপিয়ে যায়। মূলকাহিনী অবিকৃত রেখেই সৃজিত আরও রোমাঞ্চকরভাবে গল্প বলেছেন। সংলাপে ভরা দৃশ্যও একঘেয়ে লাগেনি।
বড়দিনে হলে গিয়ে না হোক, নিজের ল্যাপটপ বা মুঠোফোনে তাই ফেলুদাকে মিস করলে চলবে না।