সুবিধা পাবেন আরও ২০ লক্ষ কৃষক, আসছে স্ব-ঘোষণার মাধ্যমে কৃষকবন্ধুতে নথিভুক্তির সুযোগ
এবার কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে নিজস্ব ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে। কৃষিদপ্তর বৃহস্পতিবার এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। কৃষকরা যে ঘোষণাপত্র জমা দেবেন, তার ফর্ম প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম নথিভুক্তকরণের প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কৃষিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসগুলিতে ফর্ম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁদের আশা, নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর আরও অন্তত ২০ লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। এখন কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্ত কৃষকের সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ। এই প্রকল্পে নথিভুক্ত কৃষকরা বছরে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পান। এছাড়াও নথিভুক্ত অনূর্ধ্ব ৬০ কৃষকদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তাঁর পরিবার এককালীন দু’ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পায়। কৃষিদপ্তর জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রায় দু’বছর আগে কৃষকবন্ধু প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে জমির মালিক ও নথিভুক্ত বর্গাদাররা এর আওতায় আসতে পারতেন। কিন্তু বহু কৃষক নিজস্ব উদ্যোগে চাষ করলেও মালিকানা বা নথিভুক্ত বর্গাদারের নথি তাঁদের কাছে না থাকায় এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারছিলেন না। অনেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমিতে চাষবাস করলেও সেটি নিজের নামে মিউটেশন করাননি। এবার তাঁরাও নির্দিষ্ট ফর্মে ঘোষণাপত্র দিয়ে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন।
কৃষিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জটিলতার জন্য জমির মিউটেশন করতে অনেক ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগে। অনেক কৃষকের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্রও থাকে না। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ঘোষণা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে। এর মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম ও মৃত্যুর সার্টিফিকেট, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সার্টিফিকেটের সংশোধন প্রভৃতি রয়েছে। এই ব্যবস্থা এবার কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রেও চালু করা হল।
আবেদনকারীকে যে বয়ানে ঘোষণাপত্র দিতে হবে, সেটি কৃষিদপ্তর তৈরি করে দিয়েছে। তাতে আবেদনকারী লিখবেন, যে তথ্য তিনি দিচ্ছেন, তা নিজের জ্ঞান ও বিশ্বাস অনুযায়ী সত্য। যদি পরবর্তীকালে এই তথ্যে কোনও অসঙ্গতি পাওয়া যায়, তাহলে কর্তৃপক্ষ সহায়তা প্রদান বন্ধ করে দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে প্রদত্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে। অর্থ ফেরত না দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ওই ঘোষণাপত্রের সঙ্গে যে জমিতে চাষ করেন, তার খতিয়ান, দাগ, জেএল নম্বর, মৌজা, ব্লক প্রভৃতি জানাতে হবে। জমির পরচা যাঁর নামে আছে, তাঁর সঙ্গে কী সম্পর্ক সেটাও জানাতে হবে। নিজের নামে মিউটেশন না হলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিতে যাঁরা চাষ করছেন, তাঁদের এতে সুবিধা হবে। কিছু নির্দিষ্ট নথি জমা দিলে সেটাও ফর্মে উল্লেখ করতে হবে।
রাজ্য সরকারের হিসেব অনুযায়ী, মোট কৃষক পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৭২ লক্ষ। নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর রাজ্যের প্রায় সব কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় আনা যাবে বলে আশাবাদী কৃষিদপ্তর। কৃষকবন্ধু প্রকল্পের মধ্যে থাকলে খরিফ মরশুমে শস্যবিমা প্রকল্পের জন্য নতুন করে নাম নথিথুক্ত করতে হবে না। সরকারকে ধান বিক্রির করার ক্ষেত্রেও আলাদা করে নাম নথিভুক্ত করার প্রয়োজন পড়বে না।