গুড়ের বাহারি স্বাদ চেনাতে উৎসব করবে ‘মিষ্টি উদ্যোগ’
জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। আর যত বেশি শীত, তত বেশি জাত খেজুর গুড়ের উৎপাদন। বাজার জুড়ে এখন ম ম করছে গুড়ের গন্ধ। নতুন নতুন মিষ্টিতে ভরেছে দোকান। তালিকায় গুড়ের রসগোল্লা থেকে শুরু নানা ছাঁচের সন্দেশ সহ আরও কত কিছু। কিন্তু এর বাইরে যেন অন্য কিছুর বড়ই অভাব! সেটাও এবার মিটিয়ে ফেলতে চাইছেন বাংলার মিষ্টির রূপকাররা। কীভাবে? এক কথায়, গুড়ের ‘মিষ্টি উৎসব’-এর মাধ্যমে।
কলকাতা তো বটেই, জেলায় জেলায় বড় ও নামজাদা মিষ্টির দোকানগুলিতে এই উৎসব শুরু হতে চলেছে। সেখানে থাকবে গুড়ের ‘অফবিট’ মিষ্টি। আর থাকবে পিঠেপুলি বা পাটিসাপটার মতো বাংলার চিরন্তনী স্বাদের বাহার। পিছিয়ে নেই রাজ্য সরকারও। পঞ্চায়েত দপ্তর খুব শীঘ্রই ১০ টাকার পাউচে খেজুর গুড় নিয়ে মাঠে নামতে চাইছে। সঙ্গে থাকবে পিঠেও। প্যাকেট করা পিঠের দাম ১৫ টাকা। দোকান বা বাড়িতে বসে আয়েশ করে পিঠে খাওয়ার সময় যাঁদের নেই, তাঁদের কাছে এই প্যাকেজ হাজির হচ্ছে ফাস্ট ফুডের অবতারে।
বাংলার মিষ্টান্ন বিক্রেতাদের নতুন সংগঠন ‘মিষ্টি উদ্যোগ’ আগামী মাস থেকে আয়োজন করতে চলেছে নতুন গুড়ের মিষ্টি উৎসবের। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক নীলাঞ্জন ঘোষের কথায়, ‘এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সবাইকে নিয়ে মেলা করা অনেকটাই ঝুঁকির। কারণ তাতে করোনা সংক্রমণের ভয় থেকে যায়। তাই সংগঠনের তরফে ঠিক হয়েছে, সদস্যরা তাদের নিজেদের দোকানেই এই উৎসবের আয়োজন করবে। আমরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে দোকানে নানা রকমের পিঠেপুলির বন্দোবস্ত করব।’ পাশাপাশি গুড়ের রাবড়ি, রসমালাই বা দইয়ের মতো নতুন উপকরণও থাকবে ওই উৎসবে। ফলে সাধারণ মানুষ নতুন স্বাদ যেমন পাবেন, তেমনই মিলবে পিঠে খাওয়ার আনন্দ। সংগঠনের অপর যুগ্ম সম্পাদক অমিতাভ দে এদিন বলছিলেন, ‘আমরা সবাই কম বেশি গুড়ের মিষ্টি বা গুড় বিক্রি করি। কিন্তু তাকে যদি নতুনভাবে ক্রেতাদের সামনে আনা যায়, তাহলে বাংলার মিষ্টির প্রতি আরও বেশি উৎসাহিত হবেন তাঁরা। পাশাপাশি বিক্রি বাড়লে মিষ্টি ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন।’ সংগঠনের সভাপতি ধীমান দাশ বলেন, ‘আমাদের এই উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য হল গুড় চাষিদের পাশে দাঁড়ানো। তাঁদের বিক্রিবাটা বাড়লে সকলেরই ভালো লাগবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীও উপকৃত হবে আর্থিকভাবে।’
পঞ্চায়েত দপ্তর বেশ কিছুদিন ধরেই গুড় এবং পাটিসাপটা বিক্রি করছে। অনলাইনে অর্ডার দিলে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে সে সব পণ্য। দপ্তরের অধীন ওয়েস্ট বেঙ্গল কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন নলেন গুড়, ঝোলা গুড় এবং পাটালি—তিন রকমই বেচছে। কর্পোরেশনের প্রশাসনিক অধিকর্তা সৌম্যজিৎ দাস বলেন, ‘গুড় এবং পাটিসাপটার যে চাহিদা রয়েছে, আমরা জোগান দিয়ে উঠতে পারছি না। ইতিমধ্যেই প্রায় এক লক্ষ টাকার বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আমরা ঠিক করেছি, এবার প্যাকেটে করে পিঠে বিক্রি করব। দু’টি পিঠের দাম ৩০ টাকা। সঙ্গে থাকবে ১০ টাকার নতুন গুড়ের পাউচ। রাস্তায় দাঁড়িয়েই ফাস্ট ফুডের মতো সেই পিঠে চেখে দেখতে পারবেন মানুষ।’