আশ্রমিকদের দাবি মত শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন রাস্তার দায়িত্ব ফিরিয়ে নিল রাজ্য
আশ্রমিকদের দাবি মেনে শান্তিনিকেতন (Shantiniketan)-শ্রীনিকেতন (Sriniketan) রাস্তা ফের নিজেদের দায়িত্বে নিল রাজ্য সরকার। সোমবার বোলপুরে(Bolpur) প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই একথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তাঁর এই ঘোষণায় খুশি শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকদের একটা বড় অংশ। শান্তিনিকেতনের পোস্ট অফিস মোড় থেকে শ্রীনিকেতনের কালীসায়র মোড় পর্যন্ত ওই রাস্তা শতাব্দী প্রাচীন। রাস্তাটি প্রথমে ছিল পূর্তদপ্তরেরই। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অনুরোধ মেনে নিয়ে রাজ্য সরকার ওই রাস্তাটি তাদের নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার দিয়েছিল। এদিন আশ্রমিকদের আবেদনের ভিত্তিতে ফের রাজ্য সরকারই ওই রাস্তার দায়িত্ব নেয়। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়। তবে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ছুটিতে আছি। এব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।
এদিন বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে বীরভূম জেলার প্রশাসনিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল। দুপুর ১টা ২০ মিনিট নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছন। তারপর বৈঠক শুরু করে দেন। বৈঠকের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সকালে আশ্রমিকদের একটি চিঠি পাই। সেই চিঠিতে তাঁরা ওই রাস্তাটি নিয়ে জানিয়েছিলেন। এদিন সকালেই আসার আগে ফাইলে সই করে এসেছি।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর এদিন শান্তিনিকেতনে আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান বীরভূমের(Birbhum) পুলিস সুপার শ্যাম সিং ও শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়(Kasturi Chatterjee)। পুলিস কর্তাদের কাছে পেয়ে সৌরিন বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তভানু সেন, উমা মুখোপাধ্যায় সহ বেশ কিছু প্রবীণ আশ্রমিক মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁরা বলেন, বিশ্বভারতী (Visva Bharati) কর্তৃপক্ষ এই রাস্তাটি নিয়ন্ত্রণের নামে আমাদের যাতায়াত কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা আশ্রমিক হয়েও অনেক সময় আশ্রমের ভিতরে যেতে পারি না। আগে কাচমন্দির থেকে সঙ্গীতভবন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করত বিশ্বভারতী। এখন পুরো প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করে। তার ফলে সমস্যা হচ্ছিল। তাই সমস্যা সমাধানের জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
আশ্রমিকরা বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রীকে এনিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তিন-চারদিন আগে ফের একটি চিঠি দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের সিদ্ধান্তে দমবন্ধ করা অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে। সুবীরবাবু পুলিস সুপারকে বলেন, আমরা কার্যত ‘নিজ ভূমে পরবাসী’ হয়ে রয়েছি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ঘোষণায় আমরা ভীষণ খুশি। পুলিস সুপার তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, রাস্তা পূর্তদপ্তর পেয়ে গিয়েছে। তাই এবার থেকে রাস্তায় চলাচল সংক্রান্ত কোনও অসুবিধা হলে স্থানীয় থানা, জেলাশাসক কিংবা পুলিস সুপারকে জানাতে পারেন।
এদিনের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গ্রামীণ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল বিশ্বভারতীর জমির প্রসঙ্গ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানান। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির জমি অধিগ্রহণ করে পাঁচিল তুলেছে বলে অভিযোগ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে বলেন।
দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউরি এদিন শহরের জাতীয় সড়কের একটি বাইপাস নির্মাণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে বাইপাস রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি দেখে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বাইপাস হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের হাতে নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রয়েছে। আপনারা বরং ওই এলাকায় আন্দোলন গড়ে তুলুন। কেন্দ্রীয় সরকার কেন করছে না, তা নিয়ে পোস্টার দিয়ে আওয়াজ তুলুন।