ভেলোরের আউটডোরে স্বাস্থ্যসাথীর কিয়স্ক
স্বাস্থ্যসাথীর(SwasthyaSathi)) চর্চা এখন বাংলা ছাড়িয়ে সুদূর দক্ষিণ ভারতেও(South India)। আরও সুস্পষ্টভাবে বললে দেশের দ্বিতীয় সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তামিলনাড়ুর ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ (সিএমসি), ভেলোর-এ(Vellore)। সেখানে এখন আলোচনার কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প।
সিএমসি’র উল্টোদিকে রয়েছে বাঙালিপাড়া। সেখানকার একাধিক সাইবার ক্যাফেতে খোলা হয়েছে কাউন্টার। পশ্চিমবঙ্গ(West Bengal) থেকে আসা রোগীদের স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা দিতেই এই উদ্যোগ। হাসপাতালের ভিতরে আউটডোরে ‘জি ১৭’ কাউন্টারেও খুলে গিয়েছে মমতার এই ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের কিয়স্ক। চালু হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই ২০০ জনেরও বেশি রোগী স্বাস্থ্যসাথী পোর্টালে গিয়ে কার্ডের সুবিধা পেতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ইতিমধ্যেই ৫০ জন চিকিৎসা পরিষেবাও পেয়েছেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে। সূত্রের খবর, মাত্র তিন মাসে এক কোটিরও বেশি টাকার চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেয়েছেন রাজ্যের রোগীরা। ভেলোর থেকে ফিরে মুখে হাসি ফুটেছে বাঁকুড়ার শান্তিময় কর, হাওড়ার লতিকা প্রামাণিক, পশ্চিম বর্ধমানের লালজি সেনদের।
পরিষেবা পেয়ে মুগ্ধ প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার আক্রান্ত বাঁকুড়ার শান্তিময়বাবু। সোমবার তিনি বলছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। বাংলায় আমার রোগ ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা তখন বলেন, অপারেশনের জন্য ভেলোরে যেতে। কিন্তু সামান্য রোজগার, কীভাবে অপারেশন করাব? ভেলোরে থেকে যেদিন ফিরছি, সেদিন শুনি মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ভেলোরের চিকিৎসাও অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা করেছেন।’ তারপরই সোজা ভেলোরে চলে যান শান্তিময়বাবু। চিকিৎসা করাতে তাঁর খরচ পড়েছে প্রায় তিন লক্ষ টাকা। পুরোটাই ক্যাশলেস সুবিধা পেয়েছেন তিনি। হাওড়ার লতিকা প্রামাণিকের ছেলে তন্ময় প্রামাণিক বলেন, ‘কে কী বলছেন জানি না, তবে আমার মা ক্যান্সারের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে পাঁচ লক্ষ টাকা পেয়েছে। আমি সামান্য সেলুনের দোকানে কাজ করি। চিকিৎসার খরচ ক্যাশলেস না হলে কী করে জোগাড় করতাম জানি না’ স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘রাজ্যের রোগীরা ভেলোরে যাওয়ার পর তাঁদের চিকিৎসা করাতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকে আমরা সবসময় লক্ষ্য রাখছি।’
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, মাসতিনেক আগে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয় বাঙালির অন্যতম পছন্দের ভেলোরের এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। তারপর থেকে স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে সেখানে দিনদিন ভিড় বাড়ছে রাজ্যের রোগীদের। সাধারণভাবে কোনও সরকারি প্রকল্পের সঙ্গেই ক্যাশলেস চুক্তিতে আবদ্ধ হয় না ভেলোর। সেকথা রাজ্য সরকার ও ভেলোরের চুক্তির শুরুতেই হাসপাতালের তরফে সাফ সাফ জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু, মমতার কথামতো স্বাস্থ্যসাথী বর্তমানে ক্যাশলেস বিমা প্রকল্প। সেই প্রতিশ্রুতি পালিত হবে কীভাবে? সরকার বিমা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করে, একজন প্রতিনিধিকে ভেলোরে পাঠানো হবে। তিনিই প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীর চিকিৎসার বিল মেটাবেন। স্বাস্থ্যসাথীর যাবতীয় সরকারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাহায্য করবেন ওই প্রতিনিধি। যাতে ক্যাশলেসের মাধ্যমে ভেলোরে পরিষেবা পেতে পারেন রাজ্যবাসী। ভেলোর থেকে সরকার ও বিমা সংস্থার প্রতিনিধি মুজাম্মেল আহমেদ বলেন, ‘প্রধানত জটিল ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা বেশি আসছেন। এছাড়াও নিউরো এবং হার্টের সমস্যা নিয়েও বহু মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পেতে নাম লেখাচ্ছেন। আমরা পরিষেবা দেওয়ার ২০০ শতাংশ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’