‘জয়ী’ ফুটবল বিতরণ রাজ্যের
লকডাউন কাটিয়ে চলছে আনলক পর্ব। কমছে করোনা সংক্রমণের দাপট। সুস্থতার হারও ছাড়িয়ে গিয়েছে ৯৫ শতাংশের ঘর। ফলে আর দেরি না করেই ফুটবলপ্রেমীদের মাঠমুখো করতে বিনামূল্যে ফুটবল দিচ্ছে রাজ্য সরকার। দেওয়া হচ্ছে ভলিবলও। সৌজন্যে এমএসএমই বা ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পদপ্তর (MSME Department)।
এমএসএমই’র আওতায় রয়েছে রিফিউজি হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস (Refugee Handicrafts) নামে একটি বিভাগ। ওপার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তুদের জীবন-জীবিকার বন্দোবস্ত করে দিতে সরকারি উদ্যোগে শুরু হয়েছিল এই সংস্থার পথ চলা। বাম আমলে সংস্থাটি মৃতপ্রায় হয়ে যায়। ক্ষমতায় এসে তাকে ঢেলে সাজার উদ্যোগ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সংস্থাটি চালানোর ভার তুলে দেন বাংলার প্রাক্তন তারকা ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, ক্রম্পটন দত্ত, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, নিমাই গোস্বামী এবং শান্তি মল্লিকের হাতে।
পোশাক তৈরির পাশাপাশি ঠিক হয় ফুটবল ও ভলিবলও তৈরি করবে রিফিউজি হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস। মুখ্যমন্ত্রী সেই বলের নামকরণ করেন ‘জয়ী’ (Joyee)। বিগত কয়েক বছর ভালো ব্যবসা করেছে এই সংস্থা। বাটানগরে তাদের টেলারিং ইউনিটের পাশাপাশি হুগলির চন্দননগর, তারকেশ্বর এবং বর্ধমানের কেশবপুরে খোলা হয় বল তৈরির কারখানা। গত আর্থিক বছরে সংস্থার উদ্বৃত্ত হয়েছিল ৩ কোটি ১২ লক্ষ টাকা। কিন্তু এবার করোনার থাবায় বল উৎপাদন বন্ধ। থমকে গিয়েছে বিক্রিবাটাও। ভলিবল ও ফুটবল মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার বল জমে গিয়েছে সংস্থায়। সেগুলি এখন নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে রিফিউজি হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস।
সংস্থার চেয়ারম্যান মানস ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা সংস্থাটিকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করতে পেরেছি। এখানে বহু মহিলার কর্মসংস্থান হয়েছে। এমনকী করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিকেও তাঁরা কাজ পেয়েছেন। তাঁদের পারিশ্রমিকও মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা নিরুপায়। রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের থেকে বল কেনে। এছাড়াও খুচরো বাজারে আমাদের বল পাওয়া যায়। কিন্তু খেলাধুলো এখনও বহু জায়গায় বন্ধ। তাই বলের চাহিদা নেই। এখন ফুটবলপ্রেমীদের উৎসাহ দিতে ক্লাবগুলিতে ফুটবল বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ইতিমধ্যেই গোঘাট, ঝালদা এবং শান্তিনিকেতনে ক্যাম্প করে বহু ক্লাবকে বল দেওয়া হয়েছে সংস্থার তরফে। বিতরণ করা হয়েছে রিফিউজি হ্যান্ডিক্র্যাফ্টসের তৈরি জামাকাপড়ও। মানসবাবু জানিয়েছেন, যদি কোনও ক্লাব বল নিতে উৎসাহী হয়, তাহলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান বিদেশ বসু বলেন, ‘ফুটবল এবং ভলিবল তৈরিতে মূলত এগিয়ে এসেছিলেন মহিলারা। তাঁরা স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছিলেন। এখনও তাঁরা কাজ পেতে ইচ্ছুক। আমরাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁদের কাজ দিতে চাই। তাই সবার আগে দরকার খেলাধুলোয় উৎসাহ ফিরিয়ে আনা। সেই প্রচেষ্টার লক্ষ্যেই আমরা বল বিতরণ করছি। এতে কারখানাগুলিকে ফের উৎপাদনমুখী করা যাবে এবং জীবিকা ফিরিয়ে দেওয়া যাবে।’
এভাবে বল বিতরণ করলে তো সংস্থার আর্থিক হাল খারাপ হবে। সেই ক্ষতি সামাল দেওয়া যাবে কীভাবে? সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, লকডাউন যেমন প্রায় সব শিল্পের ক্ষতি করেছে, তেমনই তাঁদের সংস্থা রিফিউজি হ্যান্ডিক্র্যাফ্টসও তার বাইরে নয়। ফলে দেদার বল বিলিতে আর্থিক অবস্থা কিছুটা খারাপ হতে পারে। তবে তা স্বল্পমেয়াদী। গ্রাম-বাংলার খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের টেনে আনতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে সংস্থারই ভালো হবে। পাশাপাশি টেলারিং সেন্টারগুলিতে যে মাল তৈরি হয়, তা রাজ্য সরকার কিনে নেয়। ফলে সেই ভরসাটুকু রয়েছে।