জানুয়ারিতেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে জিনোম সেন্টার
উত্তরবঙ্গের জীববৈচিত্রের (Biodiversity) ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদের ‘বংশানুসমগ্র’ সংরক্ষণ করতে বিশ্ববাংলা জিনোম সেন্টার (Biswa Bangla Genome Centre) খুলতে চলেছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (University Of North Bengal)। জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই সেন্টার খোলা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জিনোম সেন্টারটি বোটানি বিভাগের আওতায় থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত বায়ো ইনফরমেটিক্স বিভাগের বিল্ডিংয়ে সেন্টারটির পরিকাঠামো গড়া হচ্ছে। বোটানি বিভাগের অধ্যাপক অর্ণব সেন এই সেন্টারের নেতৃত্বে থাকবেন।
মূলত যেসমস্ত গাছ উত্তরবঙ্গ থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে, সেসব উদ্ভিদের জিনোম সংরক্ষণ করা হবে। তা দিয়ে গবেষণাও করা সম্ভব হবে। জিনোম সংরক্ষণের মাধ্যমে জীববৈচিত্রের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। সেই চেষ্টা করবেন গবেষকরা।
অধ্যাপক অর্ণব সেন বলেন, কৃষিজ ফসল সহ বিভিন্ন উদ্ভিদের বংশানুসমগ্র সংগ্রহ করে করে তারউপর এখানে গবেষণা করা হবে। আমাদের এই সেন্টারটি উত্তরবঙ্গের জীববৈচিত্র সহ আর্থ সামাজিক বিকাশে সহায়তা করবে। উদ্ভিদের জিনোমিক তথ্য প্রচুর। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিগুলি খুঁজে পাওয়া জরুরি। তাই এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দিলীপকুমার সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য এই প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়েছিলেন। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত ওই সেন্টার খোলার নির্দেশ দেন। তার পরিকাঠামোই এখন গড়া হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে প্রচুর রকমের উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলিই বিলুপ্তপ্রায়। সেগুলির মধ্যে এমনও কিছু উদ্ভিদ আছে, যা দেশের এমনকী পৃথিবীর অন্যান্য জায়গাতেও হয়তো নেই। সেই সমস্ত উদ্ভিদেরই প্রাথমিক সংরক্ষণের দায়িত্ব ও তার জিন সংরক্ষণ করবে এই জিনোম সেন্টার। যা উত্তরবঙ্গের জীববৈচিত্র ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে।
অর্ণববাবু জানিয়েছেন, বিভিন্ন উদ্ভিদের নানা প্রজন্মের জিন সংগ্রহ করে তার তথ্যপঞ্জি বানানো হবে। এখানে স্পেকট্রোফ্লোরোমিটার, পিসিআর, সেন্ট্রিফিউজ, মাইক্রোস্কোপ, ফ্রিজ, হাইএন্ড সার্ভার নিয়ে আসা হচ্ছে। একইসঙ্গে জীবাণুব্যাঙ্ক, বীজব্যাঙ্ক, পরাগব্যাঙ্ক ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য একটি শীতলকক্ষ বানানো হচ্ছে। বিশ্ববাংলা জিনোম সেন্টারে উন্নত ডেটাবেসের মাধ্যমে সম্ভাব্য চাষাবাদজনিত উদ্ভিদের শনাক্তকরণ করা যাবে। এতে এই অঞ্চলের কৃষি বিকাশের সামগ্রিক চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। এছাড়াও মাইক্রোবিয়াল জিনোম ডেটার মাধ্যমে কীটনাশক ব্যবহারের বিকল্প খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। চাল, গম, পাট, ডাল, তৈলবীজ, আখ, শাকসব্জি সহ ফসল সংরক্ষণ করা হবে। যাতে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্রের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা সম্ভব হবে। এতে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল স্থানীয়দের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ব্যবহারের কারণে কৃষকদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। মেটাজেনমিক্সের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রের মাটির বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। সেটাই পর্যায়ক্রমে কৃষকদের জানানো যাবে।