আবেদনের দু’ঘণ্টার মধ্যে মিলল ‘স্বাস্থ্য সাথী’র কার্ড
দুয়ারে সরকার(Duare Sarkar), না আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ! দু’মাসের মেয়ে আক্রান্ত হার্টের জটিল অসুখে। মাথায় হাত বাবা বিশ্বজিৎ বর্মনের(Biswajit Barman)। চাষবাস করে কোনওরকমে সংসার চালান। অত টাকা কোথায় পাবেন। মুশকিল আসান হল সরকারি প্রকল্পের ছোঁয়ায়। ওই একরত্তি মেয়ের নামে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড(Swasthya Sathi Card) করিয়ে বাড়িতে দিয়ে এলেন খোদ অতিরিক্ত জেলাশাসক। দক্ষিণ দিনাজপুরের(South Dinajpur) তপন ব্লকের যশোরাই গ্রামের কুঁড়েঘরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বলেন, এ তো আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ মিলবে ওই কার্ডে। আর চিন্তা নেই। এবার মেয়েকে সারিয়ে তুলতে সবরকম চেষ্টা চালাব।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) দুয়ারে সরকার প্রকল্প চালু করেছেন রাজ্যে। মাত্র একমাসেই রাজ্যের প্রতিটি জেলায় দুয়ারে সরকার এর প্রকল্পে নাম লিখিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। অনেকেই সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও পেয়েছেন। তেমনই একজন দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রত্যন্ত এক গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বর্মন।
তপন ব্লকের দীপখন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের(Deepkhonda Gram Panchayat)যশোরাই গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎবাবু। দুই মাস আগে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তাঁর স্ত্রী। মেয়ে একটু বড় হতেই তার হার্টে জটিল রোগ ধরা পড়ে। দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়ে যায় অনুষ্কার বাবা-মায়ের। প্রথমে ছোট্ট অনুষ্কাকে বালুরঘাটে(Balurghat) চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে চিকিৎসকরাই পরামর্শ দেন, অনুষ্কাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে হবে।
অস্ত্রোপচার করাতে হবে। সামান্য চাষআবাদ করে সংসার চলে বর্মন পরিবারের। মেয়েকে বড় কোনও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়ার মতো টাকা কোথা থেকে আসবে? তখনই প্রতিবেশীদের কাছে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের খবর পান। অসহায় বর্মন দম্পতির সমস্যার কথা বুঝতে পেরেছিলেন জেলা প্রশাসনের কর্তারাও। বৃহস্পতিবার আবেদন করার দু’ঘণ্টার মধ্যেই স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে বিশ্বজিতের বাড়িতে হাজির হন দক্ষিণ দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) জিতিন যাদব। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে স্বাস্থ্যসাথীর জেলা সেল থেকে সেই আবেদন দ্রুত রাজ্যে পাঠানো হয়। রাজ্য থেকে অনুমোদন পাওয়ামাত্রই জরুরি ভিত্তিতে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এরপর এদিন দুপুরে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) জিতিন যাদব সেই পরিবারের হাতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড তুলে দেন। অসুস্থ মেয়েকে কোলে নিয়েই বিশ্বজিৎবাবুর চোখ বেয়ে বেরিয়ে আসে জল। তবে তা আনন্দাশ্রু। বললেন, সরকার আজ আমার মেয়ের নতুন জীবন দিচ্ছে। এবার খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারব। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ওই কার্ডের মাধ্যমে শিশুটির চিকিৎসার জন্য সমস্তরকম পরিষেবা মিলবে। আবেদন করার দু’ঘণ্টার মধ্যে কার্ড দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসনের স্বাস্থ্যসাথীর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক রাণু মণ্ডল বলেন, ওই শিশুটি হার্টের জটিল রোগে ভুগছিল। দুই মাসের সেই শিশুকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে কার্ডের ব্যবস্থা করে তার বাবার হাতে তুলে দিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে কোনও পরিবার আমাদের কাছে এলে আমরা সবসময় যত দ্রুত সম্ভব তাদের হাতে কার্ড তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। এদিকে, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পেয়ে মেয়েকে বাইরে চিকিৎসা করতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৎপর হয়েছে তপনের ওই পরিবার। শুক্রবার সকালেই দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে উদ্দেশে তাঁরা রওনা দেবেন বলে জানা গিয়েছে। কার্ডের পাশাপাশি চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সবরকম সাহায্য করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে।