সুকুমার সেন – দেশের প্রথম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার
সামনেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন৷ অর্থাৎ আগামী কয়েক মাস সংবাদ শিরোনামে থাকবে নির্বাচন কমিশন ৷ জানেন কি, স্বাধীন ভারতে ভোট প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছিল তখন সুষ্ঠু ভাবে সেই গুরু দায়িত্ব পালনের ভার পড়েছিল এক বঙ্গ সন্তানের উপর ৷ তিনি হলেন সুকুমার সেন, দেশের প্রথম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার৷ আজ ওনার জন্মবার্ষিকী।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট দেশভাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীন ভারতবর্ষের জন্ম হয়৷ দেশে তখন ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে গড়া গণ পরিষদ এবং রাজ্যে রাজ্যে আইনসভা চলছিল৷ ধীরে ধীরে স্বাধীনদেশে নির্বাচন করার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা শুরু হল৷ ওই সময় কেন্দ্রে এবং রাজ্যগুলিতে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস৷ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু৷ ঠিক স্বাধীনতার সময় ড: প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও কয়েক মাস বাদেই ১৯৪৮ সালের ২৩ জানুয়ারি তাঁর বদলে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন৷
বিধান রায়ের সঙ্গে নেহরুর নিবিড় বন্ধুত্ব ছিল এবং অনেক বিষয়ে তিনি ডাক্তার রায়ের পরামর্শ নিতেন৷ ১৯৫০ সালে নেহরু তাঁকে জানালেন ভোট পরিচালনা করার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা ৷ আর সেজন্য কাকে নির্বাচন কমিশনার করা যায় সে ব্যাপারে বিধান রায়ের পরামর্শ চাইলেন৷ তখন সুকুমার সেন ছিলেন রাজ্যর মুখ্যসচিব ৷ বিধান রায়ের সেই সময় নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সুকুমার সেনকেই যোগ্য মনে হয়েছিল এবং সে কথা তিনি পন্ডিতজিকে জানান৷ ফলে এই বঙ্গ সন্তানকেই বেছে নেওয়া হয় এই গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য৷
কে এই সুকমার সেন ? যারা জানেন না তাদের অনেকেরই মনে এই প্রশ্ন জাগছে৷ সুকুমার সেনের জন্ম ১৮৯৯ সালে। তিনি শুধু নয় তাঁর অন্য ভাইরাও প্রসিদ্ধ নিজ নিজ কাজের জগতে৷ তাঁরা তিন ভাই। তাঁর মেজভাই অশোক সেন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি পরবর্তীকালে ভারতের আইনমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর ছোটোভাই অমিয়কুমার সেন বিশিষ্ট চিকিৎসক। রবীন্দ্রনাথকে জীবিত অবস্থায় শেষ দেখেছিলেন এই অমিয়কুমার সেনই। সুকুমার ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজ ও লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্বর্ণপদক পান তিনি ৷ তারপর ১৯২১ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যসচিব।
কে এই সুকমার সেন ? যারা জানেন না তাদের অনেকেরই মনে এই প্রশ্ন জাগছে৷ সুকুমার সেনের জন্ম ১৮৯৯ সালে। তিনি শুধু নয় তাঁর অন্য ভাইরাও প্রসিদ্ধ নিজ নিজ কাজের জগতে৷ তাঁরা তিন ভাই। তাঁর মেজভাই অশোক সেন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি পরবর্তীকালে ভারতের আইনমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর ছোটোভাই অমিয়কুমার সেন বিশিষ্ট চিকিৎসক। রবীন্দ্রনাথকে জীবিত অবস্থায় শেষ দেখেছিলেন এই অমিয়কুমার সেনই।
সুকুমার ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজ ও লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্বর্ণপদক পান তিনি ৷ তারপর ১৯২১ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যসচিব।
এই সুকুমার সেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে ছিলেন ২১ মার্চ১৯৫০ থেকে ১৯ ডিসেম্বর ১৯৫৮। তিনি ভারতের প্রথম দুটি সাধারণ নির্বাচন (অর্থাৎ ৫১-৫২ এবং ৫৭ ) পরিচালনা করেছেন। বিশেষত ১৯৫১-৫২ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করাটা বেশ কঠিন কাজই ছিল৷ কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা আজকের তুলনায় খুবই দুর্বল ছিল তা বলাই বাহুল্য৷ ফলে অনেক বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতরা মনে করেছিলেন নির্বাচনের নামে ছেলে খেলা হচ্ছে৷ ফলে তখন তাঁর কাজটা ছিল রীতিমতো কঠিন।
তাছাড়া আগে যেখানে রাজা জমিদার বড় বড় শিল্পপতি , ব্যারিষ্টার, রায় বাহদুর, খান বাহাদুরদের মতো কেউ কেটারা ভোটে দাঁড়াত৷ সেখানে ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রবর্তনের পরে ১৯৫১ সালে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সেক্ষেত্রে বলা চলে এক প্রকার বিপ্লব এনে দিয়েছে৷ ব্যালটের মাধ্যমে ২১ বছর হলেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করে কেন্দ্রে ও রাজ্যে জন প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ এল আমজনতার হাতে৷ ১৯৫১ সালের ২৫ অক্টোবর শুরু হয়ে পরের বছরের ২১ফেব্রুয়ারি সুকুমার সেনের নেতৃত্বে ভারতের প্রথম লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সুকুমার সেনের ক্ষেত্রে তখন সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কঠিন কাজ কারণ তখন ১৭.৬ কোটি ভোটারের ৮৫ শতাংশ ছিলেন নিরক্ষর ৷ তাঁদের কথা ভেবে প্রার্থীর নামের সঙ্গে প্রতীকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাছাড়া ওই সময় অনেক মহিলারই নিজস্ব নাম ব্যবহার হত না, তাঁরা পরিচিতি ছিলেন- অমুকের মা বা তমুকের পত্নী হিসেবে। ফলে তাঁদের নাম খুঁজে ভোটার তালিকায় তোলার কাজটা কতটা শক্ত ছিল তা অনুমেয়। পরিকাঠামো গত সমস্যা এড়াতে অজস্র সেতু নির্মাণ করতে হয়েছিল প্রত্যন্ত এলাকাতে ভোট পরিচালনার জন্য।
শোনা যায়, নেহরু যাতে প্রথম লোকসভা নির্বাচন তাড়াতাড়ি আয়োজন করা যায় তারজন্য নির্বাচন কমিশনকে তাড়া দিয়েছিলেন৷ তখন সুকুমার সেন জানিয়ে দেন, এভাবে তাড়া হুড়ো করে এ কাজ করা সম্ভব নয়৷ কারণ প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো দরকার৷ ওই অবস্থায় এই দুঁদে আমলার ভাবনা থেকেই ঠিক হয়েছিল- কীভাবে নির্বাচন প্রতিনিধিরা দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন, রাজনৈতিক প্রতিনিধির প্রতীক কেমন ভাবে দেওয়া হবে, কীভাবে গণনা হবে, কীভাবে পুরো ব্যাপারটা পরিচালনা হবে ইত্যাদি।
তাছাড়া পণ্ডিত নেহরু সুকুমার সেনকে এই দায়িত্ব দেওয়ার পর অভিনন্দন বার্তা জানানোর সময় তাঁকে নিরপেক্ষভাবে তাঁর কাজ করার কথা বলেছিলেন। জবাবে সুকুমারবাবু জানিয়েছিলেন, তিনি আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলার চেষ্টা করবেন। সেই পরিকাঠামোয় প্রথম নির্বাচন হওয়ায় বেশ কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি ধরা পড়েছিল ঠিকই ৷ কিন্তু কোনও দল বা নেতা সুকুমার সেনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের কিংবা অভিযোগ পেলেও প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে কেউ অভিযোগ তেলেননি৷ এমনকি ওই সময় যারা ব্যালটের মাধ্যমে ভোট করার কথা শুনে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেছিলেন তারাও স্বীকার করেছিলেন সেই সময় ভারতের গণতন্ত্রে সূচনাটা সফলই বলা চলে৷