বাংলার প্রতি বঞ্চনা রেলের, তথ্য দিয়ে অভিযোগ তৃণমূলের
গত নভেম্বর মাস থেকে প্রতিদিন বাংলার মানুষের সামনে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে দৈনিক সাংবাদিক সম্মেলন করা হচ্ছে তৃণমূলের তরফে। নতুন বছরের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে আজ করলেন রাজ্যের নারী ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজা ( Shashi Panja)।
তিনি বলেন, দিল্লি থেকে যে ভার্চুয়াল সম্মেলন হয়, তাতে প্রশ্ন করতে দেওয়া হয় না সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, এখানেই অন্যান্য সরকারের সঙ্গে তফাৎ। মা মাটি মানুষের সরকার জনগণের প্রশ্নের উত্তর দেয়।
দুয়ারে সরকার প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত এই অভিযানে ১.৬ কোটি মানুষ বিভিন্ন শিবিরে উপস্থিত হয়েছেন ও উপকৃত হয়েছেন। ১০০ শতাংশ সফল কোনও অভিযান হয় না, কেউ দাবিও করে না। কিন্তু, ১ শতাংশ এই অভিযানের সফলতা না পেলে সেটাকেই ভিডিও আকারে নিয়ে সেটা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে এই অভিযানের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে কিছু রাজনৈতিক দল।
ওনার মতে, নেতিবাচক মানসিকতার কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কাজ করছে। তিনি আশা রাখেন, এই অভিযান একদিন কন্যাশ্রী (Kanyashree Scheme) প্রকল্পের মতই স্বীকৃত হবে। এর পাশাপাশি তিনি জানান, ২রা জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি, যা চলবে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
রেলের ক্ষেত্রে বাংলাকে বঞ্চনার তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন শশী পাঁজা। তিনি বলেন, শিয়ালদহ কোচ মেরামত কারখানা বাবদ ২০১৮ সালের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি টাকা যা ২০১৯ সালে কমে হয় এক হাজার টাকা। আসানসোল ও হাওড়া কোচ ওয়াশিং ওয়ার্কশপ বাবদ ২০১৯ সালের বাজেটে বরাদ্দ ছিল এক হাজার টাকা। লক্ষ্মীকান্তপুর – নামখানা রেলপথ বাবদ বরাদ্দ ২০১৯ সালের বাজেটে ছিল ১০ লক্ষ টাকা। খুব অল্প টাকা বরাদ্দ হয় বর্ধমান – কাটোয়া লাইনের জন্য।
পাশাপাশি তিনি কয়েকটি রেলপথের তথ্য তুলে ধরেন যেগুলির জন্য মাত্র এক হাজার টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রের মত রেলেও বাংলা বঞ্চনার শিকার।
মন্ত্রীর কথায়, ভারতীয় সংবিধানে রেলের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে রেল সাধারণ মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করছে না। হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার সমস্ত ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ সালের বাজেটে উত্তরবঙ্গের জন্য রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০টি প্রকল্পকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ২০১৫ সালে স্পেশ্যাল পারপাস ভেহিকেল অ্যাক্ট করে কেন্দ্র এখন রেল চালানোর ৫০ শতাংশ খরচ রাজ্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। ২০১৮ থেকে রেল বাজেটকে মূল বাজেটে ঢোকানো হয়েছে। তখন থেকেই রেলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। রেলের আর্থিক অবস্থা অ্যানিমিক।
তিনি বলেন, আমরা বেসরকারি কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে নই। আমরা বুলেট ট্রেনের বিরুদ্ধেও নই। কিন্তু, কোন মূল্যে সেটা করা হচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। ৬১টি নতুন রুটে ১৫০টি বেসরকারি ট্রেন চালানোর কোথা হচ্ছে। বুলেট ট্রেন চালাতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ১৮০ কোটি টাকা। এদিকে কৃষক বিরোধী আইনের জন্য দিল্লীতে চাষি মারা যাচ্ছে, সেটা নিয়ে কেন্দ্রের হেলদোল নেই। এটা গণতন্ত্র নয়।
তিনি আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর শিলান্যাস করেছিলেন। আজও তা দেশের সবথেকে পুরনো এবং একমাত্র সম্পূর্ণ সরকারি মেট্রো। করোনার সময় মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টার নোটিশে রেল বন্ধ করা হয় পরিযায়ীদের কথা না ভেবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম পরিযায়ীদের নিজের খরচে রেলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনে।