একুশে ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল
একুশে নবান্ন দখলের লড়াই নিয়ে সরগরম বাংলা (Bengal)। প্রচার-মিছিলে গেরুয়া শিবির একদিকে হুঙ্কার দিচ্ছে, ‘অব কী বার, দোশো (২০০) পার’। আবার অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শাসকদল জানিয়ে দিচ্ছে, হাসতে হাসতে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসবে ঘাসফুলই। তবে একুশের নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরই যে প্রধান বিরোধীপক্ষ, সে কথা স্বীকার করছে তৃণমূল(TMC)। একইসঙ্গে জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত তারা। অন্তত ৫১.২ শতাংশ ভোট পেয়ে ফের ক্ষমতায় আসবে বলেই মনে করছে তৃণমূল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) থেকে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা- প্রত্যেকেই বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দখল নিয়ে আশাবাদী। সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে ‘বদলের বদল’ আনার ডাক দিয়েছে পদ্মশিবির। দলবদলের হাওয়ায় ক্রমেই পালটে যাচ্ছে নানা সমীকরণও। তৃণমূলের এককালের ‘বিশ্বস্ত সৈনিক’রাই বেসুরো হয়ে তাল কেটেছেন মাঝপথে। ফলে প্রকাশ্যে চলে এসেছে তৃণমূলের অন্দরমহলের দ্বন্দ্ব। কিন্তু এসব যে বাংলায় তৃণমূলের জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তারা।
দলের অভ্যন্তরীণ হিসাব বলছে, এবার ১৯০ থেকে ২১০টি আসন পেতে পারে তারা। গতবারের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে রাজ্যের ১৬৪টি আসনে এগিয়ে তৃণমূল। আর বাংলায় ক্ষমতায় আসার ম্যাজিক ফিগার ১৪৮-এর থেকে যা খানিক বেশি। তবে বিধানসভা ভোটে এই সংখ্যাটা বাড়বে বলেই জানাচ্ছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ হিসেব।
এবার প্রশ্ন হল, দলবদলের হাওয়ার মধ্যেও জয়ের ব্যাপারে কেন এতখানি নিশ্চিত ঘাসফুল শিবির? দলীয় সমীক্ষায় উঠে এসেছে মূলত তিনটি বিষয়। নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে সেগুলিকেই মোক্ষম হাতিয়ার বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রথমত, ২০১৯ সালে ‘মোদি ম্যাজিক’-এর সামনে অনেকটাই ফিকে দেখিয়েছিল অন্যান্য দলকে। কিন্তু লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর মুখ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েই গেরুয়া শিবিরকে বিপুল ভোটে কেন্দ্রে জয়ী করেছিলেন মানুষ। আর বিধানসভা নির্বাচনে ভোট চাইবেন দিলীপ ঘোষ। এটাই বড় পার্থক্য গড়ে দেবে। কারণ দিলীপের থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বেশি বলে সমীক্ষায় দাবি তৃণমূলের। তাছাড়া মোদিকে কুরসিতে ফেরাতে বাংলার একাংশের মানুষই ভোট দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তেমনটা হবে না।
দ্বিতীয়ত, লোকসভা ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে ছিলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী কোনও লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীও ছিলেন না তিনি। আর বিধানসভা ভোটে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তিনিই দলের মুখ। তাই বিধানসভা ভোটে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল। একই সঙ্গে সমীক্ষা বলছে, রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের সাফল্য বিরোধীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
তৃতীয়ত, পাহাড়ে বিমলের গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তন। সমীক্ষায় উঠে আসা এই পর্যবেক্ষণটি নির্বাচনের আগে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জেলাভিত্তিক হিসেবে নজর দিলে দেখা যাবে লোকসভায় বিজেপি নজর কেড়েছিল। দার্জিলিংয়ে পাঁচটি, আলিপুরদুয়ারের পাঁচটি এবং কোচবিহারে আটটির মধ্যে সাতটি আসনেরই দখল নিয়েছিল বিজেপি। ফলে সেখানে জোর ধাক্কা খায় তৃণমূল। কিন্তু বিমল গুরুংয়ে ভর দিয়েই ওই আসনগুলিতে ঘাসফুল ফুটবে। দলের হিসাব বলছে, অন্তত ৬টা আসন আসবে গুরুংয়ের হাত ধরে।
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন তো বলেই দিচ্ছেন, ”বিজেপিও অনেক হিসেব-নিকেশ করছে। ওরাও জানে ওদের কী অবস্থা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে আসছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।”