জীবনশৈলী বিভাগে ফিরে যান

রান্নার সময় আপনিও এই ভুলগুলো করেন? 

January 6, 2021 | 2 min read

আমাদের রান্নার পর্ব শুরুই হয় ভুলের হাত ধরে৷ সব্জি কাটা থেকে যার সূত্রপাত৷ এর পর ধাপে ধাপে এত ভুল হয় যে, শেষমেশ খাবার যখন পাতে পৌঁছয়, তাতে পুষ্টি যতটা থাকার কথা, তা তো থাকেই না, উল্টে হাজির হয় কিছু বিপদ৷

সব্জি জলে ভেজানো 

আমরা সচরাচর ভাল করে খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট করে কেটে রান্নার আগে পর্যন্ত সব্জি  ভিজিয়ে রাখি জলে৷ যে সব সব্জির খোসা ছাড়াতে হয় না, তাদেরও কেটে ভিজিয়ে রাখার চল আছে৷ উদ্দেশ্য, ময়লা ও কীটনাশকের বিষ মুক্ত করা৷ বিষাক্ত রংও এ ভাবে কিছুটা দূর হয়৷ সঙ্গে দূর হয় ভিটামিন বি ও সি–এর প্রায় ৪০ শতাংশ৷

বিষাক্ত রং ও কীটনাশকের দৌলতে ত্বকের রোগ থেকে শুরু করে আরও এমন সব অসুখ হতে পারে, যে ভিটামিনের সঙ্গে সমঝোতা করে হলেও ধোওয়া–ধুয়িটা ঠিক করে করা দরকার৷ সব্জি কাটার আগে ভাল করে ধুয়ে জলে ভিজিয়ে রাখা উচিত৷ তাতে কিছুটা ভিটামিন গেলে যাবে৷ 

তবে সব্জি বড় করে কাটলে, কাটার পর না ধুয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম মেনে রান্না করে নিলে ভিটামিনের অনেকটাই রক্ষা পায়৷ ফাইবার ও পুষ্টির কথা ভাবলে, সব্জির খোসা না ছাড়ানোই ভাল৷ ডায়াবিটিস, হাই কোলেস্টেরল বা মেদবাহুল্যে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য তো বিশেষ করে৷ কিন্তু তা করা যায় না এই সব রং ও কীটনাশকের জন্যই৷ তবে পাতলা করে খোসা ছাড়াতে পারেন, যাতে দু–দিকই রক্ষা করা যায়৷

দ্বিতীয় ভুল, গরম তেলের ধোঁয়া

আমাদের ধারণা, গরম কড়ায় তেল দেওয়ার পর যতক্ষণ না ধোঁয়া ওঠে ফোড়ন বা মাছ–সব্জি দিতে নেই৷ কারণ, তা হলে রান্নায় কাঁচা তেলের গন্ধ থেকে যায়৷

ধারণাটি ভুল৷ প্রতিটি তেলের নির্দিষ্ট স্মোক পয়েন্ট থাকে, অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় তেল ভেঙে গিয়ে ধোঁয়া ওঠে৷ এই ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যায় উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড৷ ভাঙে ভিটামিন৷ তৈরি হতে শুরু করে ফ্রি–র‍্যাডিক্যালস নামের ক্ষতিকর উপাদান৷ হাই কোলেস্টেরল, হূদরোগ, স্ট্রোক, অ্যালঝাইমার, ক্যানসার ইত্যাদি রোগের মূলে যার হাত আছে৷ 

ধোঁয়ার মাঝে রান্না করলেও শরীরে ঢ়োকে ফ্রি–র‍্যাডিক্যালস৷ এই সব রোগের দরজা খুলে যায়৷ হাঁপানি রোগীর সমস্যা বাড়ে৷ কাজেই কড়া গরম করে তেল দিন৷ ধোঁয়া বেরনোর আগেই, ফোড়ন–সব্জি–মাছ দিয়ে, ঢাকা দিয়ে দিন৷ ক্ষতিকর ধোঁয়ার হাত থেকে শরীর বাঁচবে৷ পুষ্টিও থাকবে অটুট৷

ভাজার সমস্যা ও সমাধান

ছাঁকা তেলে ভাজলে ভিটামিন ও প্রোটিনের পরিমাণ কমে৷ বাড়ে ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট, ওজন, অপুষ্টি এবং হাই প্রেশার–কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোকের আশঙ্কা৷

পোড়া তেলে ভাজলে অ্যালডিহাইড নামে জৈব রাসায়নিকের প্রভাবে ডায়াবিটিস, হাই প্রেশার, লিভারের রোগ, অ্যালঝাইমার, পার্কিনসন্সের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়৷

একমাত্র নারকেল তেলের স্মোক পয়েন্ট বেশি বলে বহু ক্ষণ উচ্চ তাপে গরম করলেও তা মোটামুটি অবিকৃত থাকে ও বিপদ কম হয়৷

পুষ্টিবিদদের মতে, “স্বাদের খাতিরে সপ্তাহে এক–আধবার ভাজা–বড়া অল্প  করে খেতেই পারেন৷ তবে স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে ছাঁকা তেলে না ভেজে কড়াইতে অল্প তেল দিয়ে ঢাকা দিয়ে ভাজুন, যাকে বলে শ্যালো ফ্রাই৷ মুচমুচে ভাজা খেতে চাইলে কিনে নিন এয়ার ফ্রায়ার৷ এতে বিনা তেলে আলু, বড়ি ইত্যাদি সুন্দর ভাজা যায়৷”

পোড়া তেল কি ফেলে দিতে হবে?

পোড়া তেল আরেক বার ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর৷ যেমন, কোন তেলে কত তাপমাত্রায় ভাজা হয়েছে, তেল কতক্ষণ গরম হয়েছে ও ঠান্ডা হওয়ার পর কী ভাবে তাকে রাখা হয়েছে ইত্যাদি৷ সানফ্লাওয়ার, ক্যানোলা, সর্ষে, তিল ও নারকেল তেল উচ্চ তাপেও মোটামুটি ঠিক থাকে৷ 

কাজেই মাঝারি তাপে অল্প সময় ধরে ডিপ ফ্রাই করলে পরে আরেক বার সেই তেলে রান্না করতে পারেন৷ তবে তাকে ছেঁকে রাখতে হবে৷ তেল ঘোলা হয়ে গেলে ফেলে দেওয়াই ভাল৷

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Cooking

আরো দেখুন