নজির! বিজেপি কর্মীর চিকিৎসায় পাশে দাঁড়ালেন বারাসতের পুর প্রশাসক
ভোট যত এগিয়ে আসছে তৃণমূল ও গেরুয়া শিবিরের মধ্যে আকচা-আকচি ততই বাড়ছে। ভাষণে দলীয় নেতারা আক্রমণ, প্রতি আক্রমণের পথ নেওয়ায় উত্তেজনার পারদও ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড (Swasthya Sathi Card) নিয়ে নজিরবিহীন সৌজন্যের রাজনীতি দেখল বারাসত শহর। গুরুতর অসুস্থ এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে গিয়ে সাস্থ্যসাথীর কার্ড দিয়ে এল বারাসত পুরসভা। শুধু তাই নয়, পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ওই বিজেপি কর্মীকে দ্রুত ভেলোরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজনীতির ব্যবধান ভুলে এমন বেনজির সৌজন্যবোধ দেখে শহরবাসীর পাশাপাশি খুশি বিজেপির জেলা নেতৃত্বও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসত পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ রোডের বাসিন্দা রাজু পাল (Raju Pal) এলাকায় সক্রিয় বিজেপি (BJP) কর্মী হিসেবেই পরিচিতি। তাঁর বাবা মাধব পাল পেশায় কুমোর। মাটির ভাঁড় তৈরি করে সংসার চালান। কয়েক মাস ধরে কিডনির অসুখে ভুগছেন বাইশ বছরের যুবক রাজু। বারাসত ও কলকাতায় চিকিৎসা করালেও তাঁর অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। বরং ধীরে ধীরে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। টাকার অভাবে কলকাতার বড় কোনও বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করার সাহস পাচ্ছিল না পরিবার। এই পরিস্থিতিতে ছেলের সুচিকিৎসার আশায় ‘দুয়ারে সরকার’-এর ক্যাম্পে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন করে রাজুর পরিবার। অসুস্থ রাজু ক্যাম্পে গিয়ে ছবি তুলতে পারেননি। ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পাল দম্পতি। অনেকেই তাঁকে ভেলোরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ভিন রাজ্যে গিয়ে চিকিৎসা, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের খরচ অনেক। সেই খরচের কথা ভেবেই অথই জলে পড়ে পরিবার।
শেষপর্যন্ত রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ষ্ঠতা ভেঙে মঙ্গলবার মাধববাবু বারাসত পুরসভার প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়ের (Sunil Mukherjee) বাড়িতে হাজির হন। সুনীলবাবুর ওয়ার্ডেই তাঁদের বাড়ি। রাজুর শারীরিক সমস্যার কথা শুনে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন সুনীলবাবু। দ্রুত স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পাইয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন তিনি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তৈরির মেশিন ও পুরসভার কর্মীদের নিয়ে তিনি নিজেই মঙ্গলবার হাজির হন রাজুর বাড়িতে। সেখানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ছবি তুলে ও আঙুলের ছাপ নিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কার্ড দিয়ে দেওয়া হয় রাজুকে। এমনকী দ্রুত ভেলোরে যাওয়ার জন্য নিজেই উদ্যোগ নিয়ে বিমানের টিকিটেরও ব্যবস্থা করেন। আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার বিমানেই রাজুকে নিয়ে ভেলোরে যাবেন পরিবারের সদস্যরা। এমনকী দমদম বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য বারাসত পুরসভার অ্যাম্বুলেন্সেরও ব্যবস্থা করেন দেন তিনি।
তৃণমূল নেতৃত্বের সহযোগিতায় আপ্লুত রাজুর বাবা মাধব পাল বলেন, ছেলে বিজেপি করে। সুনীলবাবু তা জানেন। তাই প্রথমে তাঁর কাছে যেতে একটু দ্বিধা হয়েছিল। সমস্ত সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে সাহায্যের জন্য তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি না থাকলে ছেলেকে চেন্নাই নিয়ে যেতে পারতাম না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং সুনীলবাবুকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। সুনীলবাবু বলেন, ওই পরিবার অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তার উপর ছেলের অসুস্থতা নিয়ে সকলেই দুশ্চিন্তায়। প্রত্যেকের রাজনৈতিক চিন্তা আলাদা হতে পারে। তবে রাজনৈতিক রং দিয়ে আমরা মানুষকে বিচার করি না। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ মতো আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো ওই বিজেপি কর্মীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। ভেলোরের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগও করিয়ে দিয়েছি। আমরা রাজুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
বিজেপির (BJP) জেলা সভাপতি শংঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমি সুনীলবাবুকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি যেভাবে একজন অসুস্থ বিজেপি কর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে আমরা খুশি। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে এরাজ্যে চিকিৎসা করাতে পারলে ভালো হতো। আমরাও যেমন দলমত নির্বিশেষে মানুষের পাশে থাকি, তেমনই সুনীলবাবু পাশে থেকেছেন।