নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে প্রথম রক্ত ঝরে আজকের দিনেই – জানুন ইতিহাস
২০০৭ সাল। জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি৷ এরই মাঝে পূর্ব মেদিনীপুরে কেমিক্যাল হাবের জন্য ১০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের নোটিশ দেয় রাজ্য সরকার৷ কোনও আলোচনা ছাড়াই নন্দীগ্রামে দেওয়া হয় নোটিশ৷ প্রতিবাদে মুখর হয় জমিদাতারা৷ সরকরাও অনড় জমি নিতে৷
নন্দীগ্রাম জমি রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে শুরু হয় প্রতিবাদ আন্দোলন৷ সেই প্রতিবাদ থামাতে গিয়েই গুলি চালায় পুলিশ৷ ২০০৭এর ৭ই জানুয়ারি শহীদ হন ভরত, সেখ সেলিম ও বিশ্বজিত৷ জমি বাঁচাতে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম৷ ঘটনার ১৪ বছর পরেও এই দিনে শহীদদের স্মৃতি তর্পণ করা হয় নন্দীগ্রামে৷
২০০৭-এর ভোররাতে নিহত হন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রথম পর্বের তিন শহীদ৷ তাই স্মৃতি তর্পণও হয় সূর্যের আলো ফোটার আগেই৷ কনকনে শীতকে উপেক্ষা করেই হাজির হন নন্দীগ্রামের মানুষ৷ মোমবাতি হাতে মিছিল হয়৷
প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামে প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাব গড়ার বরাত পেয়েছিল সালেম গোষ্ঠী। ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সুহার্তোর ঘনিষ্ঠ সুদোনো সালেম ছিলেন এই গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাবটির জন্য প্রয়োজন ছিল ১৪ হাজার একর বা ৫৭ বর্গকিলোমিটার জমি। মোট ২৯টি মৌজা নিয়ে এই কেমিক্যাল হাব গড়ে ওঠার কথা ছিল। এর মধ্যে ২৭টি মৌজাই ছিল নন্দীগ্রামে৷
কেমিক্যাল হাবের জন্য দু-ফসলি জমি দিতে অস্বীকার করে জমিদাতারা৷ আন্দোলনেও কিন্তু তৎকালীন বাম সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি৷ ফলে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ছিল অনিবার্য৷ জানুয়ারিতে পুলিশের হাতে জমি অধিগ্রহণ বিরোধী তিন আন্দোলনকারী নিহত হন৷ তাতেও অবশ্য টনক নড়েনি সরকারের৷
সেবছরই মার্চ মাসে তীব্র হয় আন্দোলন৷ জোর করে জমি অধিগ্রহণ করতে যায় রাজ্য৷ পুলিশের হাতে নিহত হন আরও ১১ জন গ্রামবাসী৷ প্রতিবাদে গর্জে ওঠে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ থেকে আম জনতা৷ পটভূমি রচিত হয় ৩৪ বছরের বাম সরকারের পতনের৷ সেদিনের কথা মনে করে আজও শোকাতুর হয়ে ওঠে নন্দীগ্রামের মাটি৷