আবাস যোজনায় লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে নজির দক্ষিণ ২৪ পরগনার
করোনা এবং ঘূর্ণিঝড় উম-পুনের ধাক্কা সামলে বাংলার আবাস যোজনা (Bangla Awas Yojana) প্রকল্পে উজ্জ্বল এই রাজ্য। এই অর্থবর্ষে ৯ লক্ষেরও বেশি মানুষকে বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এপ্রিল থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যে হিসেব পাওয়া গিয়েছে, তাতে ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
জেলাগুলির মধ্যে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (South 24 Parganas)। ২০২০-’২১ আর্থিক বর্ষে তারা বাংলার আবাস যোজনায় যত মানুষকে এই সুবিধা দেবে বলে স্থির করেছিল, তার তুলনায় বাড়তি প্রায় ১৪ হাজার মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনতে পেরেছে। যা গোটা রাজ্যে নজির তৈরি করেছে।
আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার ভিত্তিতে কারা বাড়ি তৈরির টাকা পাবেন, সেই তালিকা প্রস্তুত করা হয়। উপভোক্তাদের তিন কিস্তিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেয় সরকার। প্রথম ধাপে ৬০, পরের বার ৫০ এবং সবশেষে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। প্রতি কিস্তি পাওয়ার পর কাজের অগ্রগতি এবং তার প্রমাণ দেওয়ার পর পরবর্তী কিস্তির টাকা ছাড়া হয়। গত কয়েক বছরে এই প্রকল্পে ভালো কাজের জন্য একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকারের পুরস্কার জিতেছে এই জেলা। চলতি আর্থিক বছরে দক্ষিণ ২৪ পরগনাকেই সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল রাজ্য।
জানা গিয়েছে, এই জেলায় ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৭৮ জনকে বাড়ি তৈরির জন্য টাকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই মাইলস্টোনকে অতিক্রম করে এই জেলা এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩৩২ জনকে এই প্রকল্পের আওতায় আনতে পেরেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই টাকা পেয়ে গিয়েছেন। পাথরপ্রতিমা ব্লকে ১৯,৪৮১ জন এবং নামখানা ব্লকে ১০,৩৫১ জন বাংলা আবাস যোজনার সুবিধা পেয়েছেন। সাগর ব্লকেও ৯৫০১ জন এসেছেন এই প্রকল্পের অধীনে। এছাড়াও জয়নগর ২, কুলপি এবং কাকদ্বীপ ব্লকে ৯ হাজারের বেশি মানুষ এই সুবিধা ভোগ পেয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ২০১৬-’১৭ এবং ২০১৭-’১৮ সালে এই সুবিধা পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৭২ হাজারের মতো মানুষ। গত দু’বছরে এই সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।
জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, মানুষ যাতে সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়, তা দেখার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকি জেলাগুলির কী হাল? দক্ষিণ ২৪ পরগনার পর সব থেকে বেশি ‘টার্গেট’ দেওয়া হয়েছিল মুর্শিদাবাদকে। তবে তারা সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখন অনেকটাই দূরে। যদিও উপভোক্তারা বাড়ি নির্মাণ শেষ করে ফেলেছেন, এমন সংখ্যার নিরিখে মুর্শিদাবাদ (৯,২২২) শীর্ষে। এই মাপকাঠিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৩,৪৫৬)।
এদিকে, ছ’টি এমন জেলা রয়েছে, যেখানে এখনও ২৪-৩০ শতাংশ মানুষকে বাড়ি তৈরির টাকা দিয়ে উঠতে পারেনি প্রশাসন। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির হাল সবচেয়ে শোচনীয়। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, শিলিগুড়ি মহকুমা, দার্জিলিং, কালিম্পং ইত্যাদি জেলায় ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ এখনও এই টাকা পাননি। তবে উত্তর দিনাজপুরের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন ৭ লক্ষ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ।