পোস্তা ব্রিজ ভাঙতে বিশেষজ্ঞ সংস্থার আগ্রহপত্র চাইল রাজ্য
পোস্তা ফ্লাইওভার (Posta Flyover) ভেঙে পড়েছিল পাঁচ বছর আগে। বিবেকানন্দ রোডে নির্মীয়মাণ এই ফ্লাইওভারের ভেঙে পড়া অংশ সেই সময় সরানো হলেও বাকি অংশ সেভাবেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। তবে রোদ-জল-বৃষ্টি আর দেখভালের অভাবে এই অসমাপ্ত সেতু এখন বিপজ্জনক চেহারা নিয়েছে। ক্রমেই বাড়ছে বিপদ। কারণ মাথার উপর মরচে ধরা ব্রিজের লোহা। আর নীচে দিয়ে নিত্য যাতায়াত করছে অসংখ্য গাড়ি, বাস আর কয়েক হাজার মানুষ। কলকাতায় খাদ্যসামগ্রীর সব থেকে বড় পাইকারি বাজারও এই অঞ্চলে। দুর্ঘটনা এড়ানোই এখন প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য। তাই ধসে পড়া এই ফ্লাইওভারের কিছু বিপজ্জনক অংশ আপাতত ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এর জন্য ডাকা আগ্রহপত্রে (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) পাঁচটি সংস্থা সাড়া দিয়েছে বলে কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে। তারা চায়, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত ফ্লাইওভারের বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলতে।
গত ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ আচমকা এই নির্মীয়মাণ ফ্লাইওভারের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। সেটি দৈর্ঘ্যে ছিল প্রায় ৪০ মিটার। ওই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ২৮ জন। গত বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে এই দুর্ঘটনা ঘিরে রাজ্যজুড়ে হইচই পড়েছিল। সরকার সেই সময় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। এই ফ্লাইওভার নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত হায়দরাবাদের একটি সংস্থা ও প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ’র কয়েকজন আধিকারিককে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই বিচার এখনও চলছে। কিন্তু এই অসমাপ্ত ফ্লাইওভারের ভবিষ্যৎ কী, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দুর্ঘটনার পর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গঠিত হয়। আইআইটি’র বিশেষজ্ঞদের নিয়েও একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই ফ্লাইওভারকে রেখেই ফের পুনর্নিমাণ করা হবে, নাকি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি সরকার।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সেতু বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়নাকে পোস্তা ফ্লাইওভারের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য ডেকে আনে রাজ্য সরকার। তাঁর নেতৃত্বে কেএমডিএ এবং পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা পোস্তা ফ্লাইওভারের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। রায়না তাঁর রিপোর্টে জানিয়ে দিয়েছেন, পোস্তা ফ্লাইওভারের যা অবস্থা, তাতে এটি ভেঙে ফেলাই ভালো। দরকারে নতুন করে তৈরি করা যেতে পারে। ফ্লাইওভার নির্মাণের নকশা, নির্মাণ পদ্ধতিতে গলদ ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত কাঁচামালের গুণমানও ঠিক ছিল না বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২০০৮ সালে বামফ্রন্ট রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন এই ফ্লাইওভার নির্মাণের দায়িত্ব একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়েছিল। ২.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি ২০১০ সালে শেষ করার কথা থাকলেও, তা করা যায়নি। দেরি হওয়ায় খরচও বাড়ে। প্রথমে ১৬০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু যখন এটি অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ভেঙে পড়ে, তখনই ১৩০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
রায়না পোস্তা ফ্লাইওভারটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলার সুপারিশ করলেও এখনও তা গ্রহণ করেনি সরকার। কেএমডিএ (KMDA) সূত্রে খবর, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বধীন কমিটি এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আপাতত বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলা হবে। পোস্তা ফ্লাইওভারের ভবিষ্যৎ চূড়ান্ত হবে বিধানসভা ভোটের পর।