সিনেমাহলে দর্শক ফিরছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রসেনজিতের
‘করোনার পর পৃথিবী পাল্টে গিয়েছে’, উপলব্ধি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের (Prasenjit Chatterjee)। কতটা পাল্টেছে, তারও ব্যাখ্যায় বুম্বাদার মন্তব্য, ‘কাউকে আর বিশেষ ভাবার কোনও কারণ নেই। আমার পেশা, আমি অভিনয় করি। আমার দিকে এখনই কফি এগিয়ে দিলেন যিনি, তাঁর পেশা তিনি কফি দেন। আমরা দু’জন এক। সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ এটা আপনারা সকলকে বোঝান।’
নন্দনের ভিআইপি রুমে দাঁড়িয়ে শনিবার দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। ২৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সেন্টিনারি ট্রিবিউট বিভাগে যে সব নাম রয়েছে–ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, এরিক রোমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ফেদেরিকো ফেলিনি–তাঁদের স্মরণে গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় এগজিবিশনেরও উদ্বোধন করলেন তিনি।
ন’মাস বাড়ির বাইরে কফি খাননি। নন্দনে এসে কফির কাপ হাতে নিয়ে প্রসেনজিতের বক্তব্য, ‘যদিও আমি বাড়ির বাইরে খুব কম বেরিয়েছি, কিন্তু রাজের (চক্রবর্তী) অনুরোধে আজকে আমি এখানে।’ এক সময়ে ফেস্টিভ্যালের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। সেখানে রাজ চক্রবর্তী আসায় প্রসেনজিৎ বিচলিত হয়েছেন কি না, তা নিয়ে নানা জল্পনা ছিল টলিপাড়ায়। তবে বরফ থাকলেও গলে গিয়েছে। প্রসেনজিতের কথায়, ‘এক সময় আমার সিনিয়ররা চেয়ারম্যান ছিলেন। ঋতু (ঋতুপর্ণ ঘোষ) আমার সমসাময়িক ছিল। আমি যখন চেয়ারম্যান ছিলাম ভীষণই উপভোগ করেছি। তার পর নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব গিয়েছে। চিরকালই এই ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে আমার আত্মিক যোগ। যেমন হরনাথ চক্রবর্তীর। কোনও দিন চেয়ারম্যান হননি। তবে ফেস্টিভ্যালের কাজে সব সময় মেতে রয়েছেন।’
এ বার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখা যাবে ৪৫টা দেশের ছবি। কোন দেশের কোন ভাষার ছবি দেখবেন, প্রশ্ন শুনে হেসে বলেন, ‘কোন ছবি দেখব, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যেটা, নন্দনই সেই জায়গা যেখানে সবাই এক। কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে যে কেউ নন্দন চত্বরে চলে আসতে পারে। আমিও অনেক বার এসেছি। মাটিতে বসে সিনেমা দেখেছি। এই যে সিনেমার উৎসবে সব মানুষ এক, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ তাঁর কথা শুনে আরও স্পষ্ট হয়, করোনা তাঁকে গভীর ভাবে ভাবিয়েছে। সেই উপলব্ধি থেকেই চলচ্চিত্র উৎসবকেও অন্য ভাবে দেখছেন অভিনেতা। তবে তিনি মিস করছেন জমাটি আড্ডাটা। এ দিন ভিআইপি রুমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র-কন্যার সঙ্গে অবশ্য বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন।
বিশ্বের নামী কিছু ফেস্টিভ্যাল যখন পুরোপুরি ভার্চুয়াল, তখন কিফ তুলনায় রক্তমাংসের। সেটা কেমন লাগছে? প্রসেনজিৎ স্পষ্ট করেন, ‘এর জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেব। করোনাতে যে সব ক্ষেত্রের ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়েছে, সিনেমা একটা। আজকে ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে বাংলার দর্শক যে সিনেমাহলে ফিরছেন, সেটা সবচেয়ে বড় পাওনা। আমিও যে আজ এখানে এসে দাঁড়ালাম, সেটা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই।’ ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিনে নন্দনে প্রসেনজিৎ। আবার বিকেলে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সে প্রসঙ্গ উঠতেই প্রসেনজিৎ বলেন, ‘সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেই ঋতু আমাকে ফোন করে জানিয়েছে যে ও শহরে ফিরেছে।’
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরাগী প্রসেনজিতের ইচ্ছে ছিল, তাঁর ছবি নিয়ে ফেস্টিভ্যাল করার। সে ইচ্ছে খানিকটা পূরণ করছে এ বারের কিফ।