বিজেপির সমালোচনাকে খন্ডন করে রাজ্যের উন্নয়নের প্রশংসা কেন্দ্রীয় সচিবের
দিল্লির বিজেপি নেতারা যখন একের পর এক রাজ্যে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাজের জোরদার সমালোচনা করছেন, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব দুর্গাশঙ্কর মিশ্র (Durga Shanhar Mishra) শহরে এসে মমতা সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। রাজ্যের শহরাঞ্চলে চলা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজগুলির পর্যালোচনা করতেই শুক্রবার কলকাতায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব দুর্গাশঙ্কর মিশ্র। দিনভর তিনি স্বচ্ছ ভারত মিশন তথা মিশন নির্মল বাংলা, আম্রুত, হাউজিং ফর অল তথা বাংলার বাড়ি প্রকল্পগুলির কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন। কলকাতা পুরসভার ইজ অব ডুয়িং বিজনেসেরও (ইওডিবি) ব্যাপক প্রশংসা করেন তিনি। বৈঠকেই তিনি বলেন, কলকাতা পুরসভার এই কাজ খুব ভালো হয়েছে।
বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের পাওনা রয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে হাউজিং ফর অল প্রকল্পে ৪৫০ কোটি টাকা, আম্রুত প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা রয়েছে। সেই বকেয়া টাকা দিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তরের অফিসাররা। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব হাউজিং ফর অল প্রকল্পের টাকা দিয়ে দেবেন বলে জানিয়ে দেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আধার লিঙ্কিংয়ের কাজ বাকি আছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হলে বকেয়া টাকা দিয়ে দেবেন বলে দুর্গাশঙ্কর মিশ্র বৈঠকে আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
গত বছর যখন তিনি পর্যালোচনা করতে এসেছিলেন, তখন রাজ্যের ৫০টি পুরসভা নির্মল শহর হতে পারেনি। প্রকাশ্য শৌচমুক্ত (ওডিএফ) বন্ধ করা যায়নি। এবার অবশ্য সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২তে। দ্রুত এই সাফল্য অর্জন করায় তিনি রাজ্যের প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি এই সংখ্যাটি একেবারে শূন্য করার লক্ষ্যে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তরের অফিসারদের কাজ করতে বলেছেন। একইরকমভাবে তিনি প্রশংসা করেছেন সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রাজ্যের কাজের অগ্রগতি নিয়েও। আম্রুত প্রকল্পের কাজ বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন সচিব। ওই প্রকল্পের কাজ কোথায় কোথায় হচ্ছে, কী ধরনের কাজের অগ্রগতি, তা পুরোদমে তুলে ধরা হয় বৈঠকে। সেই কাজ খতিয়ে দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এছাড়াও হাউজিং ফর অল প্রকল্পের জিও ট্যাগিংয়ে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে হাউজিং ফর অল প্রকল্পের কাজ ভালোই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্গাশঙ্কর মিশ্র। কিছু ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা বাকি রয়েছে। এর জন্য আধার লিঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে যে সমস্যা রয়েছে, তা মিটিয়ে ফেলতে বলেছেন তিনি। বিভিন্ন প্রকল্পে ম্যাচিং গ্র্যান্ট হিসেবে রাজ্য সরকারের যদি কিছু বাকি থাকে, তা দিয়ে দিতে বলেছেন। বৈঠকে আলোচনা হয় হকারদের বেনিফিট দেওয়ার কর্মসূচি নিয়ে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হকারদের জন্য যে প্রকল্প রয়েছে, তার কাজ চলছে।
আগামী মার্চ মাসের মধ্যে দেড় লক্ষ হকার বেনিফিট পাবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের অফিসাররা। বৈঠকেই দুর্গাশঙ্কর মিশ্র বলেন, সামগ্রিকভাবে রাজ্যে কাজ ভালোই হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে সমস্যা আছে, তা সমাধান করতে বলা হয়েছে। বৈঠকে কিছুক্ষণের জন্য হাজির ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। শনিবার দুর্গাশঙ্কর মিশ্র দিল্লি ফিরে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবের এই সফর এবং তাঁর প্রশংসা বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজ্যে উন্নয়নের কাজ কতটা দ্রুত হচ্ছে। বিজেপি নেতাদের রাজনৈতিক সমালোচনাকে প্রকারান্তরে খণ্ডন করে দিয়ে গেলেন দুর্গাশঙ্কর মিশ্র।