স্বাস্থ্যসাথীর সৌজন্যে বৃদ্ধার ১০ কেজি টিউমার অস্ত্রোপচার
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) স্বপ্নের প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথীর (swasthyasathi) দৌলতে মুখে হাসি ফুটল ফরাক্কার গরিব জেলে পরিবারে। রীনা হালদার নামে এক ৬২ বছরের মহিলার তলপেট থেকে বেরল ১০ কেজির টিউমার! চিকিৎসাশাস্ত্রে এই ধরনের টিউমারকে বলা হয় পেলভিক এসওএল বা ‘স্পেস অকুপায়িং লিশন’। ১৪ দিন ভর্তি এবং অপারেশন মিলিয়ে শনিবার পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকায় পকেট থেকে কানাকড়িও খরচ হয়নি রীনাদেবীর পুত্র বিশ্বনাথবাবুর।
গড়িয়ার নয়াবাদ এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই অপারেশন হয়েছে। সেখানকার সার্জারির প্রধান ডাঃ সৌরিন দাস বলেন, এই ধরনের টিউমার অপারেশনে দেরি হলে শারীরিক অস্বস্তি তো বাড়তই, পাশাপাশি টিউমার বেড়ে ফুসফুসে চাপ দিত। শ্বাসের সমস্যা শুরু হত। এইসব ক্ষেত্রে বেশি দেরির অর্থ রোগীর প্রাণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।
হাসপাতাল ও রোগিণীর পরিবার সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বিন্দুগ্রামের বাসিন্দা রীনাদেবী। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই ছেলে মাছ ধরেন। সেই উপার্জনে কষ্টেসিষ্টে সংসার চলে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে তলপেটে অল্প অল্প ব্যথা ও কষ্ট শুরু হয় তাঁর। ধীরে ধীরে পেট ফুলতে শুরু করে। শুরু হয় অসহ্য ব্যথাও। বিভিন্ন জায়গায় দেখিয়ে শেষে নয়াবাদের ওই হাসপাতালে ২৬ ডিসেম্বর ভর্তি হন তিনি। সিটি স্ক্যান সহ বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করে বিশালাকার ‘অ্যাবডোমিনাল মাস’ বা তলপেটে থাকা মাংসপিণ্ডের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। স্থির হয় ৫ জানুয়ারি অপারেশন হবে।
কিন্তু অপারেশনের আগে রীনাদেবীর বুকে সংক্রমণ হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি দিয়ে সারানো হয় সেই সংক্রমণ। এরপর ৫ জানুয়ারি অপারেশন টেবিলে অস্ত্রোপচারকালীন এত বড় ওভারিয়ান টিউমার দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে চিকিৎসকদের গোটা টিমও। শুধু টিউমারটিই ওজন দেখা যায় ১০ কেজি। জড়িয়ে থাকা অন্যান্য অংশ মিলিয়ে প্রায় ১৩ কেজি। সেটি বার করে ক্যান্সার আছে কি না, জানতে বায়োপ্সির জন্য পাঠানো হয়েছে।
শনিবার রীনাদেবীর পুত্র বিশ্বনাথবাবু বলেন, মাছ ধরে সামান্য রোজগার। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে কোনওভাবেই এই অপারেশন করা সম্ভব হতো না। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। টিউমার বিদায় নেওয়ায় মুখে হাসি ফুটেছে বৃদ্ধা রোগিণীরও। বললেন, ঋণী রইলাম মমতার কাছে।