শোভন-বৈশাখী অবশেষে বিজেপি দফতরে, স্বাগত জানাতে একা শঙ্কু
রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫। অবশেষে রাজ্য বিজেপির দফতরে পা রাখলেন শোভন-বৈশাখী। অনেক মান-অভিমানের পালা শেষে এলেন। তবে ৬ মুরলীধর সেন লেনের সদর দফতরে নয়, এলেন হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে। রবিবার সন্ধ্যায় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান বলে আগেই জানিয়েছিলেন তাঁরা। কথা ছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় সঙ্গে বৈঠক হবে। তবে সেই বৈঠকের জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হয় শোভন, বৈশাখীকে। ৭টা ১৫ মিনিট নাগাদ আসেন কৈলাস। তার পরে শুরু হয় বৈঠক। রাত ৯টা নাগাদ বৈঠক শেষে চলে চা-পান পর্ব।
বিজেপি (BJP) সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবারের বৈঠকে ইতিবাচক ফল মিলেছে। সেটা বোঝা যায় শোভন-বৈশাখীর কথাতেও। রবিবার আরও একটি বিষয় নজর কাড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের কথা বলতে সংবাদমাধ্যমের সামনে শুধু বৈশাখীই মুখ খুলেছেন। রবিবার দেখা গেল ক্যামেরার সামনে এগিয়ে এলেন শোভনও। বললেন, ‘‘এই জোনে ৫১টি বিধানসভা আসন রয়েছে। বৈঠকে সকলে নিজের নিজের মত প্রকাশ করেছেন। সকলে মিলে এক সঙ্গে কাজ করব।’’ একই সুরে বৈশাখীও জানান, তিনি সবার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চান।
গত সোমবার শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Baishakhi Banerjee) নিয়ে বাইক র্যালি করার কথা ছিল কৈলাসের। কিন্তু শেষবেলায় অসুস্থতার কথা জানিয়ে আসেননি শোভন-বৈশাখী। মুকুল রায় ও অর্জুন সিংহকে নিয়ে নমো নমো করে মিছিল সারেন কৈলাস। এর পর থেকেই শোভন-বৈশাখীর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। যদিও একদিন যেতে না যেতেই সংবাদমাধ্যমের সামনে দুঃখপ্রকাশ করেন বৈশাখী। তার পরে ঠিক হয়, দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলা শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে সোমবার একটি মিছিল করবে। সেই মিছিলের ঠিক আগের সন্ধ্যায় দলের দফতরে এসে রবিবার বিজেপিকে যেন অনেকটাই স্বস্তি দিলেন তাঁরা। এখন আশা করা হচ্ছে, সোমবারের মিছিলে আর অনুপস্থিত হবেন না বহু চর্চিত এই জুটি।
আগেই জানা গিয়েছিল, রবিবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ ২ নম্বর সেন্ট জর্জেস গেট রোডের আগরওয়াল হাউসে আসবেন শোভন-বৈশাখী। ১০ তলা এই বাড়ির বেশ কয়েকটি তল ভাড়া নিয়েই বিধানসভা নির্বাচনের জন্য রাজ্য বিজেপির কার্যালয় তৈরি হয়েছে। সন্ধে থেকেই সংবাদমাধ্যমের ভিড় ছিল সেখানে। আর সেই ভিড়ের থেকে একটু দূরে অপেক্ষা করছিলেন বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। শোভনকে পর্যবেক্ষক করে কলকাতা জোনের যে কমিটি তৈরি হয়েছে তাতে বৈশাখীর মতো শঙ্কুদেবও রয়েছেন সহ-আহ্বায়ক হিসেবে। পৌনে ৭টার সময় শোভনের প্যাজেরো গাড়ি এসে দাঁড়ায়। বাঁ দিকের দরজা খুলে নামেন পার্পল রঙের শাড়ি পরা বৈশাখী। অন্য দরজা খুলে প্রায় একই রঙের ম্যাচিং কুর্তা পরা শোভন। স্বাগত জানাতে এগিয়ে আসেন শঙ্কুদেব।
শোনা গিয়েছিল, একই পদে তিনি ও শঙ্কুদেব থাকা নিয়েই শুরুতে আপত্তি জানিয়েছিলেন বৈশাখী। কিন্তু রবিবার দেখা যায় সেই শঙ্কুদেব একাই দেড় বছর আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এই জুটিকে স্বাগত জানান। নিয়ে যান আগরওয়াল হাউসের ৮ তলায়।
এই বাড়ির ৮ তলাতেই রয়েছে কলকাতা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনশলের জন্য নির্দিষ্ট একটি ঘর। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর আস্থাভাজন নেতা উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুনীলের উপরেই কলকাতা জোনের দায়িত্ব। কৈলাস আসার পরে সেই ঘরেই শুরু হয় বৈঠক। সেখানে সুনীল, কৈলাস, শোভন, বৈশাখী, শঙ্কুদেব ছাড়াও ছিলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, রাজ্যের সহ সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতা জোনের আহ্বায়ক দেবজিৎ সরকার। আর ছিলেন বাংলার নির্বাচন প্রস্তুতি তদারকির দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখওয়াত।
রাজ্য বিজেপির অন্য শীর্ষ নেতারা অবশ্য কেউই রবিবার সন্ধ্যায় হাজির ছিলেন না হেস্টিংসের কার্যালয়ে। শোভন-বৈশাখী আসার আগে আগেই চলে যান রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তারও আগে কার্যালয় ছাড়েন মুকুল রায়। ৮ তলায় বৈঠক শুরুর ঠিক পরে পরেই বেরিয়ে যেতে দেখা যায় রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কেও। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিজেপি দফতর ছাড়েন শোভন ও বৈশাখী।