শুধু মন্ত্রিত্বই নয়, বৈশাখীর জন্যে সন্তানও ছেড়েছেন শোভন, বললেন স্ত্রী রত্না
শুধু মন্ত্রিত্বই নয়, এক মহিলার জন্য নিজের সন্তানদেরও ছেড়ে গিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এমনই অভিযোগ করলেন তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় (Ratna Chatterjee)। বলা বাহুল্য, সেই ‘এক মহিলা’ হলেন শোভনের (Sovan Chatterjee) বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (Baishakhi Banerjee)। যাঁকে পাশে নিয়ে সোমবার ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন শোভন। যে কর্মসূচিতে তিনি চাঁছাছোলা ভাষায় তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন। তার পরদিন, মঙ্গলবারেই শোভনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন রত্না।
প্রসঙ্গত, শোভন-বৈশাখী সঙ্গে বিজেপি-র সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরেই রত্নাকে তখনকার মতো মুখ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রত্না তা মেনেও চলছিলেন। কারণ, তৃণমূলের একাংশের আশা ছিল, শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে বিজেপি-র দূরত্ব বাড়তে থাকলে সমীকরণ বদলালেও বদলাতে পারে। কিন্তু সোমবার কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি-র হয়ে রাস্তায় নামতেই রত্নার উপর থেকে দলের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। অন্তত মঙ্গলবার তাঁর বয়ান তেমনই বলছে।
দলের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে স্বামী ও তাঁর বান্ধবীকে খোলাখুলি আক্রমণ করেছেন রত্না। বিজেপি-র কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে দিদির ‘কানন’ দাবি করেছিলেন, ছেঁড়া চটির মতো মন্ত্রিত্ব ছেড়ে এসেছিলেন তিনি। নীতিগত প্রশ্ন তুলে আক্রমণ করেছিলেন মমতাকেও। সেই প্রসঙ্গেই রত্না আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেছেন, ‘‘কেন উনি সব কিছু ছেড়েছেন, যদি সে সব কাজের ব্যাখ্যা দিতেন, তাহলে আর এত ভাবতে হত না। একটা মহিলার জন্যেই তো উনি ছেঁড়া চটির মতো মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন! ছেঁড়া চটির মতো শোভনবাবু পরিবারকেও ছেড়ে পালিয়েছেন।’’ রত্না আরও বলেন, ‘‘একজন মহিলার জন্য যেভাবে তিনি নিজের সন্তানদের ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন, তাতে কারও সমালোচনা করার আগে নিজে আয়নায় মুখ দেখুন!’’ মঙ্গলবার বৈশাখীর নাম মুখে আনেননি রত্না। নাম না করেই তুলোধনা করেছেন শোভন-বৈশাখী জুটিকে।
রত্নার প্রশ্ন— ‘‘বাবা হিসেবে যিনি নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, তিনি কী ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করছেন?’’ শোভনের স্ত্রী-র কথায়, ‘‘শোভনবাবু হচ্ছেন তৃণমূলের একজন কুলাঙ্গার সন্তান। সেই কুলাঙ্গার এখন বিজেপি-তে গিয়ে তৃণমূলের সমালোচনা করছেন! ৩৬ বছর যে মায়ের কাছে খেয়ে-পরে শোভনবাবু বড় হলেন, সেই মায়ের তিনি বদনাম করছেন।’’ শোভন-জায়ার আরও বক্তব্য, ‘‘শোভন আর ওই মহিলার মুখে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা মানায় না। মমতাদি আর আমাকে উনি বলেছেন আয়নায় মুখ দেখতে। সকলের আগে উনি বরং নিজের মুখ আয়নায় দেখুন। প্রয়োজনে আমি পাঁচ ফুটের একটা আয়না ওঁর বাড়িতে পাঠিয়ে দেব।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৪ অগস্ট বিজেপি-তে যোগ দিলেও গত দেড় বছর কোনও কর্মসূচিতে যোগ দেননি শোভন। ওই বছরই ভাইফোঁটার দিন বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে ফোঁটা নিতে গিয়েছিলেন শোভন। গত দেড় বছরে বার বার কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, রত্নাকে দল থেকে ছেঁটে ফেলার শর্তে তৃণমূলে ফিরে আসতে রাজি শোভন। কিন্তু তৃণমূলের শীর্ষনেতারা বার বার দাঁড়িয়েছেন রত্নার পাশেই। ফলে শোভন-বৈশাখীর তৃণমূলে ফেরা সম্ভব হয়নি।
বিজেপি-তে গেলেও এখনও বেহালা পূর্ব কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রতীকে জেতা বিধায়ক শোভন। কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষের আগে অবধি ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও ছিলেন তিনি। মাঝে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে শোভনের দূরত্ব তৈরি হওয়ায় রাজ্য সরকারের নিরাপত্তাও পেয়েছিলেন শোভন। সেই প্রসঙ্গ টেনে রত্নার আক্রমণ, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী তো তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার আগে মন্ত্রিত্ব, বিধায়ক পদ, সরকারি নিরাপত্তা ছেড়েছিলেন। শোভনবাবু এত নীতি-নৈতিকতার কথা বলছেন! তা হলে এখনও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি কেন? সরকারি নিরাপত্তাই বা নিয়েছিলেন কেন?’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘একজন মহিলার জন্য তিনি যেমন মেয়র, মন্ত্রিত্ব ও পরিবারকে ছেড়েছিলেন, তেমনই বেহালা পূর্ব এবং ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের সঙ্গেও প্রতারণা করে তিনি পালিয়েছেন। আসলে সকলের সঙ্গেই প্রতারণা করেছেন শোভন। শুধুমাত্র একজনের জন্য!’’