এবার #মিটু অভিযোগ টুম্পা খ্যাত অভিনেতার বিরুদ্ধে
‘‘কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালবাসা ছাড়া, আমিও তাদেরই দলে বারবার মরে যায় যারা’’, এ সব তাঁরই কথা। অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের (Anirban Bhattacharya) গলায় এই গানটি নিয়ে টলিউড জুড়ে আজও চর্চা চলে। সম্প্রতি তাঁকে দেখা গিয়েছে জনপ্রিয় গান ‘টুম্পা’-তে র্যাপ করতে। অভিনেতা, প্রাক্তন রেডিয়ো জকি, গীতিকার, লেখক, কবি, কমেডিয়ান দীপাংশু আচার্য (Dipangshu Acharya)। তাঁকে নিয়ে উত্তাল ফেসবুক। না, তাঁর গান বা লেখা নিয়ে না, এমনকি তাঁর অভিনয় নিয়েও না। তাঁর ‘নির্যাতনের ইতিহাস’ নিয়ে। যে ইতিহাস এত দিন পাতায় ছাপেনি। অন্ধকারে ছিল সবটা। তাঁরই প্রেমিকা, বান্ধবী ও স্ত্রী মুখ খুললেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সাল ২০০৮। দীপাংশুর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান শ্রেয়সী চৌধুরী (Sreyashi Choudhury)। রবিবার শ্রেয়সী সেই সময়কার কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তাঁর ফেসবুক পোস্টে। জানা যায়, সম্পর্কে থাকাকালীন প্রতি দিন শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চলত শ্রেয়সীর উপরে। বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ক্রমাগত আত্মহত্যা করার হুমকিও দিতেন দীপাংশু। বাড়ি বয়ে এসে মারধর করতেন শ্রেয়সীর বাবা-মায়ের সামনেই। এমনকি শ্রেয়সীর যোনিতে লাথিও মেরেছিলেন তিনি। শ্রেয়সীর লেখা থেকে তাঁর অস্তিত্ব— সমস্তটাই কুক্ষিগত করে রাখতে চাইতেন তিনি। কবিতার খাতায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে অগ্নিকাণ্ড বাধিয়ে ফেলেছিলেন। শ্রেয়সীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, দীপাংশু আচার্য্ তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীকেও মারধর করতেন ঠিক একই ভাবে।
প্রায় তিন বছর হতে চলল দীপাংশু ও তাঁর স্ত্রী আলাদা থাকেন। একাধিক বার ডিভোর্স চাওয়া সত্বেও গীতিকার ডিভোর্স দিতে রাজি হননি। তিনি শর্ত দিয়েছেন, যদি গার্হস্থ্য হিংসার কথা সামনে আনতেই হয়, তবে সেটা আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলতে হবে। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন দীপাংশুর বর্তমান স্ত্রী। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘শ্রেয়সীর মতো আমিও একই শারীরিক ও মানসিক হিংসার শিকার। যেহেতু আমি এই মুহূর্তে আইনি জটে জড়িয়ে, তাই বিস্তারিত ভাবে এই বিষয়ে আমার কথা বলার অনুমতি নেই। কিন্তু এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছি বহু দিন ধরে। আইনি প্রক্রিয়ার খামতির কারণে আমি কেবল প্রমাণ জোগারের চেষ্টা করে চলেছি। মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের প্রমাণ কী ভাবে দিতে হয় জানি না আমি। তার উপরে শিল্পের দোহাই দিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর মানুষও তো কম নেই এ পৃথিবীতে।’’
মিটু অভিযোগে অভিযুক্ত দীপাংশু জানান, তাঁর কারওর সঙ্গেই এখন কোনও সম্পর্ক নেই। তাই তিনি পোস্টের ব্যাপারে জানেন না। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, অনেক ঘটনাতেই রং চড়ানো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘হ্যাঁ, মারামারি হয়েছে। তবে সেটা দু’তরফেই। আর শ্রেয়সীর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদের পরেও আমাদের বন্ধুত্ব ছিল। এমনকি সে আমার দ্বিতীয় বিয়ের তত্ত্বও সাজিয়েছিল। আমি আমার বর্তমান স্ত্রীয়ের কাছে কয়েক বছর আগে ক্ষমাও চেয়েছি একটি পোস্টের মাধ্যমে। যাঁরা এখন আমার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সেই বন্ধু-বান্ধবীরাই পোস্টটি তখন উড়িয়ে দিতে বলেছিল।’’ এর পর তাঁর আর্থিক অনটনের কথা জানান দীপাংশু। আপাতত কলকাতায় তাঁর থাকার জায়গা নেই। গোটা একটা পরিবার তাঁর মুখ চেয়ে রয়েছে।
দীপাংশুর বন্ধু তিতাস রায় বর্মন বলেন, ‘‘বাংলা নতুন গানের পরিসরটাই এমন নারীবিদ্বেষী এবং টক্সিক! তাঁরা মহান প্রেমের গান লিখে বাহবা কুড়োন এবং স্ত্রীয়ের গায়ে হাত তোলেন। দীপাংশুকে গত ১৫ বছর ধরে দেখেছি বিভিন্ন সময় তাঁর প্রেমিকা ও স্ত্রীকে অত্যাচার করতে, চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে, স্ত্রীয়ের পিয়ানো ভেঙে দিতে, গলা টিপে ধরতে, ভরা রাস্তায় সপাটে চড় মারতে। কিন্তু এঁরা প্রত্যেকে পার পেয়ে যান কালচারাল ক্যাপিটাল থাকায়। তাঁদের তাঁবেদাররা এঁদের আড়াল করেন প্রতি বার। তাঁদের সৃষ্টির এমন জয়জয়কার শুরু করেন যে অভিযোগকারিণীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এই সার্কেলটা এবার ভাঙা উচিত।’’
দীপাংশু ও শ্রীতমার আরও এক বান্ধবী চান্দ্রেয়ী দে বললেন, ‘‘রাত ৩টেয় দীপাংশুর স্ত্রী আমাকে ফোন করে বলেন, দীপাংশু তাঁর চুল কেটে দিয়েছে, প্রচন্ড মারছে, তিনি কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। আমি গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসি নিজের বাড়িতে। কিছু ক্ষণের মধ্যে উপস্থিত হন দীপাংশু। আমার বাড়ির দরজা টানাটানি করতে থাকেন। প্রতিবেশীদের সামনেই চিৎকার থেকে কান্নাকাটি, সবই করে চলেন টানা পাঁচ ঘণ্টা। দরজা না খোলায় শেষে ফিরে যান।’