এবার দুয়ারে সরকারের প্রচারে খোদ সিপিএম নেতা
জেলায় একমাত্র সিপিএম (CPIM) পরিচালিত পুরসভা ছিল তাহেরপুর। এই পুরসভার অধীনস্থ প্রতিটি বাড়ি থেকেই এবার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এমনকী পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তথা এলাকার প্রবীণ সিপিএম নেতাও এখন দুয়ারে সরকার (Duare Sarkar) কর্মসূচির প্রচার চালাচ্ছেন। এনিয়ে এলাকার রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ১৯৯৩ সালে তাহেরপুর (Taherpur) পুরসভা তৈরি হয়। তারপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মাত্র একবার এই পুরসভা বামেদের হাতছাড়া হয়েছিল। বরাবরই জেলা ও রাজ্য রাজনীতিতে তাহেরপুর সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই পরিস্থিতিতে এখনও পুরসভা ভবন চত্বর সিপিএমের লাল পতাকায় ছেয়ে রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত দুয়ারে সরকার কর্মসূচির ফ্লেক্স রয়েছে। পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সিপিএমের রতনরঞ্জন রায় বলেন, এতদিন সিপিএমের দখলে থাকলেও বর্তমানে প্রশাসকমণ্ডলী পুরসভা পরিচালনা করছে।
দুয়ারে সরকার সরকারি কর্মসূচি হওয়ায় বাধ্য হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ছবি দেওয়া ওই ফ্লেক্স নিয়ে আমরা প্রচার চালাচ্ছি। আমরাও চাই মানুষ সরকারি সুযোগ সুবিধা পাক। এই পুরসভায় মোট ১৩টি ওয়ার্ড রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ছ’হাজার পরিবারের প্রায় ২২হাজার মানুষ বসবাস করেন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ডিসেম্বর মাস ও জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মোট তিনটি ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্প হয়েছে। তাতে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য প্রায় ছ’হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০০টি পরিবার ইতিমধ্যেই ওই কার্ড হাতে পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে পুরসভার ১৩টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু এবছর বিধানসভা নির্বাচনে সেই অঙ্ক বদলে দিতে পারে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অনেকেই বলছেন, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে নদীয়ার মাটিতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর তাহেরপুর পুরসভা সংলগ্ন মাঠে সভা করেছিলেন। ওইসময় মোদি হাওয়াতেই এলাকার সিংহভাগ মানুষ পদ্মফুলে ছাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই এখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হাতে পেয়ে বিজেপির হওয়ায় গা ভাসাতে চাইছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাই লোকসভায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রের কোনও সুযোগ-সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। বরং মমতা দিদির স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছি। তাই এবছর নির্বাচনে আর পুরনো ভুল হবে না। শহর তৃণমূল সভাপতি পরিতোষ ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সবসময় চান সরকারি পরিষেবা সবার মধ্যে পৌঁছে যাক। তাই বর্তমান রাজ্য সরকার কখনোই রাজনৈতিক দল, ভেদাভেদ না করে সকল মানুষের দুয়ারে গিয়ে, সরকারি প্রকল্প পৌঁছে দিচ্ছে। তাহেরপুরও তার ব্যতিক্রম নয়। যেকারণে বাধ্য হয়ে বিদায়ী পুরসভার চেয়ারম্যানকেও মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কথা বলতে হচ্ছে। এলাকায় এখনও বেশ কিছু উদ্বাস্তু পরিবার রয়েছে। তাঁদের অনেকেই এখনও পর্যন্ত বাস্তুজমির দলিল করাতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে গত সোমবার রানাঘাটে জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় পাঁচ হাজার উদ্বাস্তু পরিবারকে নিঃশর্ত জমির দলিল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুশির হাওয়া বইছে।