পরিবারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’: অস্বস্তিতে দিলীপ
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের পরিবারের সদস্যরা তৃণমূল সরকারের জনপ্রিয় কর্মসূচি দুয়ারে সরকার-এ অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড (Swasthya Sathi Card) করিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার ও দলের সবচেয়ে বড় সমালোচকের গ্রামের বাড়ির লোকজন এই কার্ড করানোর খবর জনৈক এক পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় এই খবর। দলের অন্দরেও এনিয়ে প্রবল অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে স্বয়ং দিলীপবাবু এদিন প্রথমে জনসভায় ও পরে একান্ত ফোনালাপে ‘ভাঙব তবু মচকাব না’ গোছের সাফাই দেন। বলেন, আমার কোনও পরিবার নেই। ৩৮ বছর ধরে আমি গ্রামের বাড়িতে থাকি না। তাই আমার আত্মীয়রা কে, কী করেছে, তা আমি জানি না। তবে ওরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে থাকলে বোকামি করেছে। আমি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের বিরোধিতা করছি না। সরকারের প্রকল্প কারও বাপের সম্পত্তি নয়। রাজ্যের নাগরিক হিসেবে সুযোগ পেলে তো আমিও করাব। কিন্তু দিদিমণি এই প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের মানুষের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছেন। কারণ, এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ৫ লাখ টাকা করে স্বাস্থ্যবিমা করানোর জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থানই নেই সরকারের স্বাস্থ্য বাজেটে। মানুষ এই কার্ড নিলেও বিপদের সময় পরিষেবা পাবে না। জ্বর হলে কি মাথায় স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড ছুঁয়ে দিলে রোগ সারবে? আমরা তাই এই ধোঁকাবাজির বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করছি।
ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের আদি বাসিন্দা দিলীপবাবুর নিজের ও সম্পর্কিত ভাইরা সপরিবারে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করিয়েছেন দুয়ারে সরকার কর্মসূচির লাইনে দাঁড়িয়ে। ওই ভাইরা আবার বিজেপি’র স্থানীয় স্তরের কমিটির শীর্ষ পদেও রয়েছেন। ফলে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর রাজ্য রাজনীতি ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়। বিজেপি বিরোধী দলগুলিও তাদের মতো করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, পাল্টা সমালোচনার মাধ্যমেই বিতর্ক থেকে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন দিলীপবাবুর অন্যতম জনপ্রিয় নেতা বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল মঙ্গলবার মঙ্গলকোটের জনসভায় চাঁচাছোলা ভাষায় বলেন, ‘দিলীপ ঘোষের পরিবার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করেছে। কারণ ওরা বুঝেছে, বিজেপি দলটাই ভোটের পর আর থাকবে না। মুছে যাবে। পরিবারের লোকজন সেটা বুঝতে পেরেছেন বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পে নাম লিখিয়ে রেখেছেন। এভাবেই ওঁরা আগেভাগে সারেন্ডার করেছেন।’
বাংলার দুই বিরোধী দল কংগ্রেস ও সিপিএম স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে এই বিজেপি ও তৃণমূলের এই দ্বৈরথকে আগাগোড়া সুনির্দিষ্ট নাটকের চিত্রনাট্য বলে বর্ণনা করেছে। বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, দিলীপবাবুর বাড়ির লোকজন এই কার্ড করানোর মধ্য দিয়ে এই গট আপ নাটকের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। এই দুই দল আসলে যাত্রার রাম-রাবণের চরিত্রের মতো অভিনয় করছে। রাজনীতির মঞ্চে একে অপরের বিরুদ্ধে বাগযুদ্ধ চালিয়ে পর্দার আড়ালে একই বিড়ি ভাগ করে খাচ্ছে। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী বলেন, সরকারি প্রকল্পের সুযোগ যে কোনও নাগরিকই নিতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও, দিলীপবাবুর পরিবারের লোকজন কেন তা ঘটা করে নিতে গেলেন? এর থেকেই কী প্রমাণিত হয়, বাংলার মানুষ বুঝে যাবে।