মমতার ধাঁচে জনসংযোগের ট্যুর কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের
বিরোধীরা যতই কটাক্ষ করুক না কেন, প্রশাসনকে জনতার দরজায় পৌঁছে দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। মুখ্যমন্ত্রী সহ তাঁর ক্যাবিনেটের সব সহকর্মী সরেজমিনে তদারকি করছেন এই কর্মসূচির। তাঁর এই কর্মসূচির প্রশংসা করেছেন শারদ পাওয়ার, অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের মতো বিজেপি বিরোধী জাতীয় স্তরের একাধিক নেতৃবৃন্দ। নানা রাজ্যে এনিয়ে চর্চাও শুরু হয়েছে।
ভোট শিয়রে বলে বামশাসিত রাজ্য কেরলেও জনতার সমস্যা ও চাহিদা জানতে অনেকটাই মমতার পথ ধরলেন সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন (Pinarayi Vijayan)। যদিও দুয়ারে সরকারের মতো সরাসরি যাবতীয় উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে তাঁর সরকার জনতার দরবারে পৌঁছায়নি। তবে বিজয়ন নিজে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজ্যের ১৪টি জেলা সফর করে জনতার সমস্যার কথা শুনেছেন। তাঁর এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কেরল ট্যুর’। সকালে ও বিকেলে প্রতিদিন দু’টি করে জেলায় পৌঁছেছেন বিজয়ন। সেখানে পাদ্রী, মৌলবি, পুরোহিত সহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতিষ্ঠিত ও ওজনদার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
পাশাপাশি লেখক, শিল্পী, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, মহিলা, যুবসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের প্রতিনিধিদের অভাব-অভিযোগের কথা মন দিয়ে শুনে নোট নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সকালে অভ্যাগতদের খাইয়েছেন ভারী ব্রেকফাস্ট। সন্ধ্যার বৈঠকে ছিল চা-কফি সহযোগে জলযোগ। সরকারি কর্মসূচি হলেও অতিথিদের খবর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়েছেন জেলা সিপিএমের সম্পাদকরা। তাই বিজয়নের ওই বৈঠকগুলিতে তাঁরাও ঠাঁই পেয়েছেন। যেহেতু মুখ্যমন্ত্রীর ‘কেরল ট্যুর’, তাই জেলার মন্ত্রীরা এই কর্মসূচির অঙ্গ হতে পারেননি।
স্বয়ং বিজয়ন রাজ্য চষে মানুষের নানা সমস্যা বা চাহিদার কথা শোনার কর্মসূচি ঘিরে কেরল জুড়ে চর্চা চলেছে স্বাভাবিকভাবে। তাই বিরোধী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোট চুপ করে বসে থাকতে চাইছে না। সোমবার তারা ঘোষণা করেছে, আগামী ১ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালাও গোটা রাজ্য পরিক্রমা করবেন। ১৪টি জেলার ১৪০টি বিধানসভা কেন্দ্রেই পৌঁছবেন তিনি। তিনিও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাছাই করা কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর ‘সাজানো রথে’ চেপে সমর্থকদের হর্ষধ্বনি উপলব্ধি করবেন।
যুযুধান দুই শিবিরের প্রধান কাণ্ডারীদের এহেন কর্মসূচি নিয়ে কেরলের রাজনীতি এখন সরগরম। দু’পক্ষই যে ভোটের কথা ভেবেই এই পথ বেছেছে, তা নিয়ে কারও সংশয় নেই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এ বিজয়রাঘবনের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী সারা বছর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই চলেন। মানুষের অভাব-অভিযোগ নিয়ে এর আগেও তিনি জেলা সফর করেছেন। তাই তাঁর ‘কেরল ট্যুর’ কর্মসূচির পিছনে অন্য অভিসন্ধি খোঁজা অবান্তর। ইউডিএফ জোটের অন্যতম নেতা জি দেবরাজন বলেন, ভোটের আগে সবাই জনসংযোগ বৃদ্ধির উপর জোর দেয়। বিজয়নও তাই করেছেন। আমরাও সে পথে হাঁটছি।