ভোটমুখী ঘোষণা বাজেটে? পাল্টা অঙ্ক তৃণমূলের
পশ্চিমবঙ্গের ভোটের কথা মাথায় রেখে সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায় রাজ্যের জন্য ঢালাও প্রতিশ্রুতি থাকবে বলে অনুমান করছে তৃণমূল। দলের বক্তব্য, যার বেশির ভাগ প্রকল্পে নামমাত্র আর্থিক ব্যয়ভার কেন্দ্র বহন করবে এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পগুলিও নাম কি ওয়াস্তে হবে। কিন্তু প্রতিটি প্রকল্প বা যোজনাই হবে প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সরকারের নামে।
নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) সরকারের এমন কৌশল আঁচ করে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিরোধের আগাম কৌশল নিচ্ছে তৃণমূল। দলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অতীতেও এই ঘটনা দেখা গিয়েছে। সমস্ত প্রকল্পে কেন্দ্র জোরজবরদস্তি নিজেদের নাম ঢোকাতে চায়। আমাদের বক্তব্য, যেখানে গোটা যোজনার ব্যয়ভারই কেন্দ্র বহন করছে, সেখানে অবশ্যই তারা নিজেদের নামেই তার ঘোষনা ও প্রচার করুক। কিন্তু আমরা টাকা দেবো আর নাম কিনবে মোদী সরকার, এটা তো মানা যায় না।“ সুদীপবাবুর কথায়, “রাজ্যকে তার প্রাপ্য টাকা দেওয়ার জন্য আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ক্রমাগত দাবি জানিয়ে আসছেন। কেন্দ্র কর্ণপাতও করছে না। ভোটের আগে শুধু মাত্র নাম কেনার জন্য বিভিন্ন চমক দেওয়া কথাবার্তা বলছে কেন্দ্র। রাজ্যের চা এবং কয়লা বিভিন্ন জায়গায় রফতানি করে কেন্দ্র তার কোষাগার কীভাবে ভরাচ্ছে, তা নিয়ে কোনও কথা শোনা যায় না দিল্লির মুখে।“
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, তৃণমূলের অনুমান অমূলক নয়। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের (West Bengal Assembly Election 2021) আগে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) রেলবাজেট বক্তৃতাকে ‘বাংলা এক্সপ্রেস’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন বিরোধীরা। আর এ বার পশ্চিমবঙ্গের মেট্রো রেলের বিভিন্ন প্রকল্প শেষ করার জন্য যে ভাবে সময় বেঁধে দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী, তা পশ্চিমবঙ্গের ভোটের দিকে তাকিয়েই বলে মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, আসন্ন বাজেট বক্তৃতায় রাজ্যের নগরোন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থবরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা করবে কেন্দ্র। নতুন বেশ কিছু প্রকল্প ঘোষণাও করা হবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনার সুফল কলকাতায় গিয়ে পাওয়া যাবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার সঙ্গে সংযুক্ত হয়নি। কিছু কিছু ব্যক্তি এ রকমই, কি করা যাবে!’
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি (BJP) রাজনীতির মাত্রা চড়াবে— এটা অনুমান করে তৃণমূল সরকার কেন্দ্রের ওই প্রকল্পে সম্মতি জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বল পাঠিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রের কোর্টে। তাঁর যুক্তি, ‘‘কৃষকরা রাজ্যের পোর্টালে আবেদন করেননি। যে হেতু তাঁরা কেন্দ্রের পোর্টালে আবেদন করেছেন, তাই কেন্দ্রেরই উচিত ছিল রাজ্যকে তা জানানো। কিন্তু রাজ্যকে এত দিন তা জানানো হয়নি।’’ তাঁর কথায়, কেন্দ্র এত দিন আবেদনকারীদের তালিকা রাজ্যকে দেয়নি। তাই কৃষকরা বঞ্চিত হয়েছেন। কেন্দ্র আবেদনকারীদের তথ্য দিলে রাজ্য তা যাচাই করে কেন্দ্রকে পাঠাবে। তার পরেই ওই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন আবেদনকারী কৃষকরা (Farmers)। ঘটনা হল, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্য সম্মতি দিলেও বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে প্রচার করছে বিজেপি। সূত্রের মতে, বিজেপি-র পক্ষ থেকে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বলা হচ্ছে যে, মোদীই কৃষকদের কথা ভেবে টাকা দিচ্ছেন। তিন বারে দু’হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা। বিজেপি-র দাবি একলপ্তেই ৬ হাজার টাকা কৃষকদের নাকি দেওয়া হবে।