কেন্দ্র সরকার কৃষিবিরোধী, জনবিরোধী ও অগণতান্ত্রিকঃ তৃণমূল
প্রায় দু’মাস হতে চলল সিঙ্ঘু সীমান্তে দরিদ্র কৃষকদের আন্দোলন। ইতিমধ্যেই এই আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৬০ জন কৃষক।
আজ এই কৃষি আইনগুলির ক্ষতিকারক দিক পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তুলে ধরতে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তৃণমূল সাংসদ ডঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার (Kakoli Ghosh Dastider) । তিনি বলেন, বিল পাস হওয়ার সময় থেকেই এই বিলের ভয়ঙ্কর দিকটি অনুধাবন করে এই বিলের বিরোধীতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। লোকসভায় তাদের বলতে দেওয়া হয়নি বিলের বিরুদ্ধে। রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদদের গায়ের জোরে বার করে দেওয়া হয় সংসদ চত্বর থেকে। তারপর ভোট না করিয়ে পাস করানো হয় এই বিল। এই বিল যে শুধু কৃষক বিরোধী তাই নয়, জনবিরোধীও একাধারে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত সরকারকে বারবার বলছে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে।
কাকলির দাবি, এই ঠাণ্ডায় দিল্লির সিঙ্ঘু সীমান্তে কৃষকরা প্রায় দু’মাস ধরে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন। কৃষক পরিবারের স্বার্থে এই আইনগুলো প্রত্যাহার করা উচিৎ। এগুলো কৃষক ও জনবিরোধী আইন।
প্রথম আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই বিলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা থেকে বহু জিনিস বাদ দেওয়া হয়েছে যা মানুষের প্রতিদিন লাগে। মজুতদারের হাত শক্ত করা হয়েছে। কৃষকরা যেই আলু ১০/১২ টাকা কিলো দরে বিক্রি করছে, পুঁজিপতিদের হাত ঘুরে সেই আলু জনতার হাতে আসছে ৮০ টাকা কিলো দরে। এরকম জনবিরোধী আইন কোনও কেন্দ্রীয় সরকার আনতে পারে, ভাবা যায় না।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বাস্তবে কৃষকদের জন্য অনেক কিছু করার দরকার ছিল। স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশে কৃষকদের জন্য সরকারের কী কী করা প্রয়োজন, সেটা নির্দেশ করা ছিল। সেগুলোর প্রতি কোনও গুরুত্ব না দিয়ে পুঁজিপতিদের স্বার্থ দেখা হয়েছে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ইত্যাদির বন্দোবস্ত না করে পুঁজিপতিদের সুবিধার্থে ক্ষতিকারক জেনেটিকালি মডিফায়েড বীজকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এই সরকারের থেকে দেশের স্বার্থের কাজ আশা করা বৃথা বলে তিনি কটাক্ষ করেন। বিল আনা হয় অধ্যাদেশ হিসেবে। অধ্যাদেশ জারি করে বিল পাস করানো অগণতান্ত্রিক। এই সরকার কৃষিবিরোধী, জনবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক সরকার। তিনি বলেন।
দ্বিতীয় আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই আইন নীল চাষ আইনের সমান। কৃষককে বাধ্য করা হচ্ছে পুঁজিপতিদের স্বার্থে কাজ করতে। নাহলে বিল পাস হওয়ার আগেই পুঁজিপতিদের ওয়্যারহাউস কেন তৈরি হল?
কাকলির যুক্তি, রাজ্যের অধিকার বাইপাস করে কিনতে পুঁজিপতিরা সরাসরি কৃষকদের থেকে উতপন্ন কিনতে পারবে। এই আইনে বলা হচ্ছে, কৃষকরা প্রয়োজনে আদালতের দারস্থ হতে পারবে। কিন্তু, বাস্তবে তারা কাজকর্ম ছেড়ে সুপ্রিম কোর্টে পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে পারবেন?
তৃতীয় আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ওয়ান মার্কেটের কথা বলা হচ্ছে। বাংলার চাষিরা মূলত প্রান্তিক। তাদের জমি এক হেক্টরের কম। তারা ভিন রাজ্যে কী করে যাবে তাদের উৎপন্ন বিক্রি কোর্টে? কেন্দ্রের শাসকদলের আইন প্রনেতারা দেশের মানুষের সম্বন্ধে কিছুই আনেন না। কৃষি রাজ্যের বিষয়। সেখানে রাজ্যের অধিকারকে খর্ব করা মানে সাংবিধানিক পরিকাঠামোতে আঘাত।
তিনি বলেন, বাংলায় সরকার কৃষকদের (Farmers) পাশে আছে ও ক্রেতার পাশে আছে। কেন্দ্রের সরকার গায়ের জোরে আইন পাস করাচ্ছে। তাদের জনগণের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা নেই। তাদের দায়বদ্ধতা আছে কিছু পুঁজিপতির প্রতি।
পাশাপাশি বাংলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, গত ৯ বছরে বাংলার কৃষকদের আয় তিনগুণ হয়েছে। ২০১১ সালে কৃষকদের বার্ষিক আয় ছিল ৯০ হাজার টাকা যা বেড়ে হয়েছে ২.৯৭ লক্ষ টাকা। এর কারণ রাজ্যে কৃষক বন্ধু (Krishak Bondhu) প্রকল্প, কৃষি বীমা, কৃষি জমির মিউটেশন ফি ও খাজনা মুকুব এবং অন্যান্য সুবিধা।