কয়লাকাণ্ড: বিজেপি নেতার বাড়িতে সিবিআই হানা
কয়লা পাচারকাণ্ডে (Coal Scam) এবার বিজেপি নেতার বাড়িতে হানা দিল সিবিআই। বুধবারই সিবিআইয়ের একটি টিম রানিগঞ্জ থানার বক্তারনগরে জয়দেব খাঁর বাড়িতে হানা দেয়। বেশ কয়েকমাস আগে কলকাতার বিজেপি পার্টিঅফিসে দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে যোগদান করেন তিনি। তাঁর বাড়িতে সিবিআই হানা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে। অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। তিনি কোনও পদে নেই বলে বিষয়টি হালকা করার চেষ্টা হলেও রানিগঞ্জে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার বিশাল ফ্লেক্সের নীচে এখনও জ্বলজ্বল করছে জয়দেব খাঁর নাম। যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, উনি যে কয়লা পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তা এলাকার সবাই জানে।
এছাড়াও অনুপ মাঝি ঘনিষ্ঠ নারায়ণ নন্দা ওরফে নারায়ণ খড়কাতকি, আইনজীবী গোপাল নন্দার রানিগঞ্জের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদে জন্য তাঁদের এক আত্মীয়কে সিবিআই নিয়ে যায়। এদিন রানিগঞ্জের পাঞ্জাবি মোড়ে কয়লা পাচারের প্যাডের মূল অফিসে সন্ধান পেয়েছে সিবিআই। বহু সিবিআই অফিসার কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি করেন। সিবিআই (CBI) সূত্রের দাবি, এই অফিস থেকেই প্যাড কিনে রাজ্যজুড়ে চলত কয়লার অবৈধ পাচার। বহু নথি এদিন উদ্ধার হয়েছে। এর পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলের ১০টি জায়গায় সিবিআই অভিযান চালিয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, লালার এই শাগরেদরা বিভিন্ন কোম্পানি খুলে কয়লার কালো টাকা সাদা করতেন।
গোরু, কয়লা পাচার নিয়ে সিবিআই তদন্ত নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বিধানসভা ভোটের আগে বড় রাজনৈতিক ইস্যু। এতদিন এনিয়ে শাসক দল তৃণমূলকে লাগাতার আক্রমণ করেছে বিজেপি। তৃণমূল (Trinamool) নেতা বিনয় মিশ্রর বাড়িতে সিবিআই হানার পর বিজেপির আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বেড়েছে। যদিও এদিন বিজেপি নেতার বাড়িতেই সিবিআই হানা দেওয়ায় পাশা উল্টে গেল। ওই নেতাকে না পেলেও তাঁর বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। এরপরেই রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় অনুপ মাঝির ঘনিষ্ঠ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু বছর খানেক আগে কারবার নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে। এলাকা থেকে গা ঢাকা দেন তিনি। প্রায় আট মাস আগে দিলীপবাবুর হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করেন। তাঁর বাহুবল ও অর্থবল কাজে লাগে বিজেপির। তারপরে রানিগঞ্জে যখনই বিজেপির (BJP) সভা হয়েছে, জয়দেব খাঁ হোর্ডিং, ফ্লেক্স তৈরি করে গেরুয়া শিবিরকে সাহায্য করেছেন। এখনও রানিগঞ্জে তাঁর ‘সৌজন্যে’ লেখা ও ছবি সহ বিজেপির ফ্লেক্স রয়েছে। এমন প্রভাবশালীর বাড়িতে সিবিআই হানা দেওয়া নিয়ে চরম অস্বস্তিতে বিজেপি শিবির। যদিও এনিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, সিবিআই কারও বাড়িতে গেলেই তো তিনি দোষী নন।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাসু বলেন, কয়েকদিন আগেই দেওঘরে দিলীপ ঘোষ এই নেতাকে নিয়েই পুজো করেছেন। এবার তাঁর বাড়িতে সিবিাআই হানা। কী বলবে বিজেপি? আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম যত অসামাজিক কাজ হয়, সবার সঙ্গে বিজেপির যোগ রয়েছে। তবে এনিয়ে ওই বিজেপি নেতাকে ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি।
তবে এদিন কয়লা পাচারকাণ্ডে বেশকিছু তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এদিন সকালে সিবিআইয়ের একটি বড় টিম রানিগঞ্জের পাঞ্জাবি মোড়ে ট্রান্সপোর্টের একটি অফিসে হানা দেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি। এখান থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি অফিসাররা উদ্ধার করেছে। কয়লা পাচারে ব্যবহৃত প্যাডের মূল অফিস এখানে ছিল। সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের একের পর এক জায়গায় সিবিআই হানা নিয়ে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।