সহায় স্বাস্থ্যসাথী, বেসরকারি হাসপাতালে নিখরচায় স্টেন্ট পেলেন প্রৌঢ়
হঠাৎ বুকে অসম্ভব ব্যথা অনুভব করেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা গৌর সামন্ত। বয়স ষাটের গোড়ায়। তারপর আর জি কর হাসপাতাল ঘুরে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে হার্টের অপারেশনও হয়। তাঁর বুকে একটি স্টেন্ট বসেছে। সুস্থ আছেন গৌরবাবু। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের (Swasthya Sathi Card) মাধ্যমে বিনামূল্যে এই চিকিৎসা করিয়ে নিশ্চিন্ত তাঁর পরিবার।
বিধাননগর রোডের বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সি গৌর সামন্তের হৃদপিণ্ডের সমস্যা নতুন নয়। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, তিন বছর আগে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তখন অল্পের উপর রক্ষা পেয়েছেন। নিয়মিত ওষুধ চলছিল। রবিবার সকালে হঠাৎ বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। ঝিমিয়ে পড়তে থাকেন ক্রমশ। ডাক্তারের পরামর্শে পরিজনরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু বেড না থাকায় সেখানে রাখা সম্ভব হয়নি। গৌরবাবুর দাদা গোবিন্দ সামন্ত বলেন, এর আগেও একবার এমন হয়েছিল। দুপুরের দিকে তড়িঘড়ি আমরা আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জানা যায়, বেড নেই। এই ধরনের রোগীকে মাটিতে রেখে চিকিৎসা করানোও সম্ভব নয়। দ্রুত বেশ কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। দরকারে অপারেশন করতে হতে পারে। সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পাওয়ায় বেসরকারি হাসপাতালের কথা ভেবেছিলাম। সেখানে বিপুল খরচ। ফলে নানারকম চিন্তা ঘিরে ধরেছিল। তখনই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কথা মনে পড়ে। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের (Private Hospital) সঙ্গে যোগাযোগ করি আমরা। তারপর সেখানে রোগীকে ভর্তি করানো হয়। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে করোনা টেস্ট সেরে হার্টের চিকিৎসা শুরু করে দেন চিকিৎসকরা। প্রথমে ঠিক ছিল, আপাতত একদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কিন্তু পরে জরুরি ভিত্তিতে ভাইয়ের বুকে স্টেন্ট লাগানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড না থাকলে এত খরচ আমাদের পরিবারের পক্ষে সামলানো সম্ভব ছিল না। এখনও পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
গৌরবাবুর মেয়ে পিউ সামন্তের কথায়, প্রথমে ঠিক ছিল, স্টেন্ট দিন দু’য়েক পর বসানো হবে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রবিবার বিকেলেই সেটি লাগানো হয়। অপারেশন ভালো হয়েছে। আপাতত ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পুরোটাই বিনামূল্যে হয়েছে। সত্যি ভাবিনি সবকিছু এত সহজে হয়ে যাবে।
স্থানীয় ৩ নম্বর বরোর কো-অর্ডিনেটর অনিন্দ্য রাউত বলেন, এটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) স্বপ্নের প্রকল্প। গরিব মানুষের কাছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য। মুখ্যমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দেন, তা বাস্তবায়িত করেন। এটাই তার উদাহরণ। মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন, এটাই তো আসল প্রাপ্তি।