নেতাজির মহানিষ্ক্রমণ – কী ঘটেছিল ১৯৪১ এর ১৬ই জানুয়ারি?
১৬ই জানুয়ারী ১৯৪১। আজ থেকে ৮০ বছর আগে ব্রিটিশদের চোখে ধূলো দিয়ে কলকাতার বাসভবন থেকে সুদূর আফগানিস্তান পালিয়ে গিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তারপর নানা ঘটনাক্রমের পর সংগঠিত করেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। বাকিটা ইতিহাস। কীভাবে এলগিন রোডের বাড়ি থেকে ব্রিটিশদের চোখে ধূলো দিয়ে কলকাতা ত্যাগ করলেন তিনি?
নেতাজির মহানিষ্ক্রমণের কাহিনী শুনুন ওনারই পৌত্র অধ্যাপক সুগত বসুর বয়ানে:
আমি প্রথমেই বলি ২০২১ হচ্ছে মহানিস্ক্রমণের ৮০ বছর। ডিসেম্বর ১৯৪০-এ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সুভাষ চন্দ্রকে নিয়ে আসা হল এই বাড়িতে। তখন আমার বাবা শিশির কুমার বসুকে তাঁর রাঙা কাকাবাবু ডেকে পাঠালেন, তাঁর বিছানার পাশে বসিয়ে একটা প্রশ্ন করেছিলেন, আমার একটা কাজ করতে পারবে? কাজটা তখন ছিল কীভাবে মহানিষ্ক্রমণের পরিকল্পনা করা যায় এবং কীভাবে ওঁকে এই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। তাই প্রায় দেড় মাস ধরে পরিকল্পনা হল। এবং শেষ পর্যন্ত ১৬ই/১৭ই জানুয়ারি ১৯৪১ এর রাতে ১:৩৫ নাগাদ আমার বাবা তাঁর ওয়ান্ডারার গাড়ি করে নেতাজিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
সাড়া রাত গাড়ি চালিয়েছিলেন কলকাতা থেকে বারারি বলে একটি জায়গা ধানবাদের কাছে সেখানে দিনের বেলা লুকিয়ে রাখা হল ওঁকে ১৭ই জানুয়ারি। তারপরে আবার তাঁকে রাত্রে বারারি থেকে গোমর স্টেশন অবধি আমার বাবা পৌঁছে দিয়েছিলেন। এটাই ছিল সুভাষ চন্দ্র থেকে নেতাজিতে উত্তরন হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ এবং নেতাজি তারপরে মহম্মদ জিয়াউদ্দিন বেশে ছদ্মবেশে দিল্লি হয়ে পেশাবর পৌঁছলেন। পেশাবরে অপেক্ষার করছিলেন তাঁর সহকর্মী মিয়াঁ আকবর শা। সেখান থেকে কাবুল। তারপরে ইউরোপ। তারপরে তো আমরা জানি ইউরোপ থেকে এশিয়া। শেষপর্যন্ত তিনি সাবমেরিনে করে এসেছিলেন। ১৯৪৩ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেছিলেন।
নেতাজি নিজে কিন্তু সবসময় বলতেন, তাঁর পরিবার এবং দেশ এক এবং সেই শিক্ষাই আমরা সবসময় পেয়েছি। আমার বাবা যখন জেল থেকে ছাড়া পেলেন সেপ্টেম্বর ১৯৪৫এ, আমার বাবা লাহোর সলিটারি কনসাইনমেন্টে ছিলেন। তারপর লালপুর জেলে ছিলেন। তখন তিনি একটা ধ্বনি শুনেছিলেন লাহোরে, বোস খানদান জিন্দাবাদ। তারপর উনি যখন লাহোর থেকে কলকাতা ফিরে এলেন, তখন তাঁর বাবা আমার ঠাকুরদা শরৎচন্দ্র বোস বলেছিলেন, এইসব ধ্বনি যেন তোমার মাথা ঘুরিয়ে না দেয়। তুমি মেডিক্যাল কলেজে পড়ছিলে, ফিরে যাও, করে পড়াশোনা শেষ করো, ডাক্তার হও। তারপরে দেশের কাজ করতেই পারো। কারণ, মনে রাখবে, এটা কিন্তু আর কিছুই নয়, এটা হচ্ছে সুভাষস এস রিফ্লেক্টেড গ্লোরি।
সেই কথাটা আমার বাবা তাই আমাকে সবসময় বলেছেন। তাই আমি মনে করি আমাদের দেশের সকলেই নেতাজির পরিবার।