দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

শুভেন্দুর চন্দ্রকোনার সভাতেও হল না ভিড়, বক্তব্যের মাঝেই মাঠ খালি

January 16, 2021 | 3 min read

আজ চন্দ্রকোণায়(Chandrakona) সভা ছিল বঙ্গ বিজেপির(BJP)। সেখানে মুখ্য বক্তা ছিলেন সদ্য তৃণমূল(TMC) থেকে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari) । তিনি বক্তব্য রাখা শুরু করতেই ফাঁকা হতে শুরু করে সভাস্থল। এজন্য তাঁকেও তাঁর ভাষণ সংক্ষিপ্ত করতে হয়। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। তাঁর ভাষণের শেষ পর্যায়ে সেখানে যা লোক ছিল, তা সদ্য সংখ্যা শেখা এক শিশুও গুণে বলে দিতে পারবে।

এই ঘটনা কিন্তু এই প্রথম না। তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বারবার একই ঘটনা ঘটছে প্রতি সভায়। কোনও কোনও সভায় নিজেদের সমর্থকদের মধ্যে মারামারিও শুরু হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনা ঘটছে সেইসব খাসতালুকে যেখানকার প্রসঙ্গ তিনি সবসময় টেনে থাকেন।

৭ই জানুয়ারি নন্দীগ্রাম শহিদ দিবস। সেখানে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে শুভেন্দুবাবু পৌঁছে যান ৬ই রাতে। ভোর রাতে শহিদ বেদীতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা। সেখানে প্রত্যেকেই তীব্র আক্রমণ করেন শুভেন্দুকে। ফিরোজা বিবি জানান, “নন্দীগ্রামের শহিদদের কেউ অপমানিত হয়নি। আমাদের অনুষ্ঠানে কোনও তাল কাটেনি। শেখ সুফিয়ান জানান, শহিদ মিনার পাপের পয়সা। যারা শহিদদের খুন করল, তাদের জমিতে সভা করেছে। পাপের পয়সা, তোলাবাজির পয়সা। উনি একদিনও এক রাত কাটাননি। ভোর ৪ঃ৪০ শহিদ হয়েছিল। আর এল রাত সাড়ে ১১ঃ৩০। ওর এখন জলাতঙ্ক রোগ হয়েছে। মাথা খারাপ হয়ে গেছে। শিশির বাবুকে বলব ছেলেকে ডাক্তার দেখান। না হলে উল্টোপাল্টা হয়ে যাবে। এখন পাগল হয়ে গেছে।”

এরপর ৭তারিখেই সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ শুভেন্দু অধিকারী নেতাই পৌঁছন নেতাই শহিদ দিবসের শ্রদ্ধা জানাতে। শহিদ স্মরণের পর নাম না করে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। তবে অনুষ্ঠানের তাল কাটে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগানে। নেতাই দিবস নিয়ে রাজনীতি মানতে নারাজ স্থানীয়রা। নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথ পাণ্ডা বলেন, “শহিদ বেদির উপরে রাজনৈতিক রং না দিলেই ভাল হত। এটা আমাদের একটু খারাপ লেগেছে। দলীয় স্লোগান শহিদ দিবসে দেওয়া ঠিক হয়নি। রাজনৈতিক নেতা হিসবে উপস্থিত হয়ে কিছু দলীয় কথা আগে কখনও বলেননি শুভেন্দু। এমন কথাবার্তা না বললেই মনে হয় ভাল হত।”

এরপর ৮ই জানুয়ারি, মঞ্চে তখন শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কিন্তু মন্তব্যে হঠাৎই তাল কাটে। সভায় উপস্থিত আম জনতা হঠাৎই নিজেদের জায়গা ছেড়ে উঠে পড়েন। চারদিক থেকে গন্ডগোলের আওয়াজ ভেসে আসে। আচমকা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আম জনতাকে বিচলিত হতে দেখে প্রথমে খানিকটা অবাকই হয় কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ঠিক কী হল, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। ঠিক সেই সময়ই এগিয়ে আসেন শুভেন্দু অধিকারী। গন্ডগোলের কারণ তখনও স্পষ্ট হয়নি। মাইকে ক্রমাগত জনতার উদ্দেশে বলা হয়, ‘কিছু হয়নি। শান্ত হয়ে বসুন।’ স্লোগানে গলা মেলানোর আহ্বানও জানানো হয়। কিন্তু বিশৃঙ্খলা যে তখনও থামেনি, তা ঝিমিয়ে পড়া আওয়াজেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

অমিত শাহের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপিতে যোগদান করার সময় শুভেন্দু অধিকারী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে তৃণমূলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার, তার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেননি তিনি। উপরন্তু দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় এবং বিজেপির যে কয়েকজন সমর্থক জনসভায় আসত, দিলীপ অথবা কৈলাসের সঙ্গে শুভেন্দুকে দেখলে তারাও অশ্রাব্য গালিগালাজ করে সভাস্থলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে চলে যাচ্ছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এই রিপোর্ট দেওয়ার পরেই ৯ই জানুয়ারি রাজ্যে সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার রোড শো এবং মঞ্চে জায়গা দেওয়া হলো না শুভেন্দুকে।

নন্দীগ্রামের পুনরাবৃত্তি যেন ১০ তারিখ জানুয়ারি পুরুলিয়ায়। দিন দুই আগেই নিজের ‘ডেরা’ নন্দীগ্রামে প্রবল বিক্ষোভ, চেয়ার ছোড়াছুড়ি, শেষে ইটবৃষ্টির মধ্যে ভণ্ডুল হয়ে গিয়েছিল বিজেপির যোগদান সভা। তড়িঘড়ি কয়েক মিনিটের বক্তব্য পেশ করে সভার ইতি টেনে দিতে হয়েছিল বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও। এবার একই চিত্র পুরুলিয়াতে। এদিন পুরুলিয়াতে কাশীপুর ন’পাড়া রোড শো শুরু করে কাশীপুর মোড় এলাকায় সভা করেন শুভেন্দু। আর শুভেন্দু বক্তব্য শুরুর আগেই চরম বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সভায়। শুরু হয় চেয়ার ছোড়াছুড়ি, হইহট্টগোল। নন্দীগ্রামের মতোই পুরুলিয়াতেও আসরে নেমে শুভেন্দুকে জনতাকে শান্ত হতে অনুরোধ করতে দেখা যায়। শেষে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য ‘ভাইপো’-কে নিশানা করেছেন নব্য বিজেপি নেতা।

এরপর ১২ই জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ-র জন্মদিনে উত্তর কলকাতা থেকে বিজেপি-র কর্মসূচিতে দেখা যায়নি শুভেন্দু অধিকারীকে। ১১ই রাতে রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সকাল ১০টায় শ্যামবাজার থেকে তাদের মিছিল শুরু হলেও তাতে থাকছেন না শুভেন্দু। এরপর আজকের সভাতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তবে কি তৃণমূলের বিশ্বাসঘাতক তকমা বিজেপির কর্মীরাও মেনে নিয়েছে? উঠছে প্রশ্ন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #suvendu adhikari, #chandrakona

আরো দেখুন