বঙ্গ চাষিদের তথ্য জোগাড় করছে বিজেপি, বিতর্ক
এবার নবান্নকে এড়িয়ে রাজ্যের কৃষকদের ‘প্রকৃত’ তথ্য জোগাড় করতে রাজ্য বিজেপিকে মাঠে নামল মোদি-শাহরা। ‘প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি’ প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য তরজা ইতিমধ্যেই চরমে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আপনি কৃষকদের তালিকা পাঠান। আমি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কিষান সম্মান নিধির টাকা পাঠিয়ে দেব। কিন্তু নবান্ন তাতে সাড়া দেয়নি। তাই ঘুরপথে চাষিদের বাড়িতে চাল ভিক্ষার নাম করে কৃষক তথ্য সংগ্রহে নেমেছে বিজেপি (BJP)। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘কৃষক সুরক্ষা কার্ড’ বিলি করছে গেরুয়া পার্টি। তাতে সংশ্লিষ্ট কৃষককে নাম, ঠিকানা, গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম, বিধানসভা কেন্দ্র সহ একাধিক তথ্য পূরণ করতে হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ‘ডেটা ব্যাঙ্ক’। রাজ্যের কৃষকদের এই তথ্য প্রতিদিন দিল্লিতে পাঠাচ্ছেন বঙ্গ নেতারা। সূত্রের দাবি, রাজ্য প্রশাসনকে এড়িয়ে এভাবে সুকৌশলে কৃষকদের থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। দলীয় কার্যকর্তাদেরই এই কাজে লাগিয়েছে পদ্ম বাহিনী।
বিজেপির এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন রাজ্য কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো কিছুই মানে না। তাই নবান্নকে টপকে কার্যত অবৈধভাবে কৃষকদের থেকে তথ্য জোগাড়ে নেমেছে গেরুয়া পার্টি। আশিসবাবুর দাবি, বাংলার কৃষকরা কেন্দ্রের এই ভাঁওতাবাজিতে ঠকতে রাজি নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রতি কৃষকদের আস্থা অটুট রয়েছে।
এদিকে, গত ৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ কর্মসূচির সাফল্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বর্ধমানের সভা থেকে এই অভিযানের সূচনা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের সব কৃষকের বাড়িতে যাবেন দলের কর্মী-নেতারা। কিন্তু গত কয়েকদিনের পরিসংখ্যান বলছে, দিল্লির নেতাদের বেঁধে দেওয়া ছক অনুযায়ী পথ চলতে গিয়ে হোঁটচ খেতে হচ্ছে বাংলার কার্যকর্তাদের। বিকল্প না পেয়ে অবশেষে ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ কর্মসূচি ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে মাত্র আট লক্ষ কৃষকের বাড়িতে পৌঁছতে পেরেছে বিজেপি। যদিও সরকারিভাবে বাংলায় ৭৩ লক্ষ কৃষক পরিবার রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, অবশিষ্ট এই বিরাট সংখ্যক কৃষকের বাড়িতে বিজেপি আদৌ ঢুকতে পারবে কি?
এই আশঙ্কাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির কিষান মোর্চার সহ সভানেত্রী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। তাঁর কথায়, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই উত্তরবঙ্গের ১০ লক্ষ কৃষকের বাড়িতে যাবে বিজেপি। প্রসঙ্গত, রবিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে এই প্রকল্প আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারেই সবচেয়ে ভালোভাবে রূপায়িত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ পরিকল্পনার কথা ব্যাখ্যা করে শ্রীরূপাদেবী বলেন, প্রতি বুথে চার থেকে পাঁচটি গ্রাম কিংবা পাড়া রয়েছে। আমরা প্রত্যেক গ্রামে দু’জন করে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ করেছি। এই অভিযানে কৃষকরা (Farmers Protest) ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা, শস্যবিমা যোজনা, সয়েল কার্ড সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে বাংলার কৃষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। বিধানসভা ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে বিজেপি ওই সমস্ত প্রকল্প চালু করবে বলেও জানান শ্রীরূপাদেবী।