বাংলার ভুতেরা
ভূত আছে কি নেই, সে বিতর্ক তো চলতেই থাকবে। শুধু একবারটি ভাবুন তো, এই ভূতেরা যদি না থাকত, আমাদের বাংলা সাহিত্য এতো মজাদার হত কি! ‘ভুষুণ্ডির মাঠ’ বা ‘ঠাকুমার ঝুলি’ ছাড়া আপনার ছোটবেলা কেমন পানসে হত না কি! এই তালিকা অবশ্যই আরও দীর্ঘ।
কিন্তু আজ আমরা সেই তালিকা নিয়ে বসব না। বরং একবার ঝালিয়ে নেব ভূতের তালিকাটা।
পেত্নী
ভারি বদমেজাজি। পা থাকে পিছনে ঘোরানো। যখন যেমন ইচ্ছে আকার নিতে পারে। এমনকী পুরুষেরও। ও বলে রাখি, এরা আসলে নারী ভূত। বেঁচে থাকতে কিছু অতৃপ্ত আশা ছিল এবং অবিবাহিত অবস্থাতেই ইহলোক ত্যাগ করেছে।
শাকচুন্নি
শাকচুন্নি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘শঙ্খচূর্ণী’ থেকে এসেছে। এয়ো স্ত্রীরা মরে হয় এই প্রকার ভূত। সাদা শাড়ি। হাতে শাঁখা। থাকে আমগাছে। আর ভর করে এয়ো স্ত্রীদের ওপর। যাতে বিবাহিত জীবন যাপন করতে পারে।
চোরাচুন্নি
চোর মরলে হয় চোরাচুন্নি। বোঝাই যাচ্ছে কী রকম? ভারি দুষ্টু প্রকৃতির। পূর্ণিমার রাতে গৃহস্থ বাড়ি হানা দেয়। তাড়ানোর উপায় গঙ্গাজল।
পেঁচাপেঁচি
সচরাচর দেখা যায় না। থাকে জঙ্গলে। দুর্ভাগা পথিকের পিছু নেয়। সুযোগ বুঝে মেরে তাঁর মাংস খায়। ভারি বিপজ্জনক।
মেছোভূত
ভারি মাছ খেতে ভালোবাসে। এটুকুই যা দোষ। থাকে গ্রামের পুকুরের ধারে। মাছ কিনে ফেরার সময় অনেকে এদের খপ্পরে পড়ে। এরা ফুঁসলিয়ে সেই লোককে বাঁশবাগানে নিয়ে যায়। তার পর ভয় দেখিয়ে মাছ ছিনিয়ে খায়। রান্নাঘর, জেলেদের নৌকা থেকেও চুরি করে মাছ।
দেও
থাকে পুকুরের ধারে। লোকজনকে জলে ডুবিয়ে মারা এদের নেশা।
নিশি
প্রিয়জনের গলা নকল করে ঘর থেকে ডেকে আনে। এই নিশির ডাকে সাড়া দিয়ে যে ঘর ছাড়ে, সে আর ঘরে ফিরতে পারে না। কথিত, নিশিরা কোনও মানুষকে দু’বারের বেশি ডাকতে পারে না। তাই সাবধান! রাতবিরেতে কেউ তিনবার ডাকলে তবেই বের হবেন।
মামদো ভূত
হিন্দুরা বিশ্বাস করে, এটি মুসলমানের আত্মা।
গেছোভূত
গেছো ভূত গাছে বসবাস করে। রাতবিরেতে গাছের নিচ দিয়ে পথচারী গেলে, তাঁর ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে।
ব্রহ্মদৈত্য
ব্রাহ্মণ মরলে হয় এই ভূত। তাই ধুতি আর পৈতে পরে থাকে। মাঝেসাঝে মানুষকে নাকি উপকারও করে।
বেঘোভূত
যাঁরা বাঘের আক্রমণে মারা যান, তাঁরাই নাকি হন বেঘোভূত। সুন্দরবন এলাকায় এ ধরনের ভূত নাকি দেখা যায়। মাঝে মাঝে এরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর জন্য বাঘের স্বরে ডেকে ওঠে।
স্কন্ধকাটা
মাথা নেই। মনে করা হয়, রেলে কাটা পড়লে বা কেউ মাথা কাটলে হয় স্কন্ধকাটা। সারাক্ষণ নাকি নিজেদের মাথা খুঁজে বেড়ায়।
কানাভুলো
এ শ্রেণীর ভূতেরা এক বা দলছুট পথিককে গন্তব্য ভুলিয়ে দেয়। ঘোরে আচ্ছন্ন করে রাখে। অচেনা স্থানে নিয়ে আসে। এর কবলে পড়ে মাঝে মাঝে মানুষ একই রাস্তায় বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে।
ঝেঁয়ো পেত্নী
সাধারণত ঝাউগাছে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যাবেলায় পথিক যদি একা একা সেই ঝাউবন বা জঙ্গল পেরোতে যায়, তখন তাকে ধরে ঝাউয়ের মগডালে চড়িয়ে দেয়।