মোদির স্বপ্নের সংসদ ভবন নির্মাণের জন্য স্থানচ্যুত ঐতিহাসিক গান্ধী মূর্তি
সংসদ ভবনের মূল ফটকের মুখোমুখি থাকা মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি। সংসদ ভবনের সঙ্গে তিন দশক ধরে জড়িয়ে রয়েছে এই মূর্তিটি। সরকারের সঙ্গে কোনও ইস্যুতে বিরোধ হলে অথবা বিক্ষোভ জানানোর সময় এই মূর্তির পাদদেশই বেছে নেন এমপি’রা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) স্বপ্নের সংসদ ভবনকে জায়গা করে দিতে শেষমেশ সেই আশ্রয়ই আর থাকছে না। দু’ একদিনের মধ্যেই সরছে সংসদ ভবন চত্বরের আত্মমগ্ন ভঙ্গিমার ওই বিশেষ গান্ধী মূর্তি। তার জন্য প্রস্তুতি তুঙ্গে। ফলে বিতর্কিত কৃষি আইন হোক বা অন্য কোনও ইস্যু — সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে নতুন জায়গাতেই ধর্ণা বিক্ষোভ কর্মসূচি করতে হবে এমপি’দের। ১৯৮৭ সালে ভাস্কর রাম ভি সুতার তৈরি করেন মহাত্মার এই আকর্ষণীয় মূর্তি। ’৮৯ সালে ওই মূর্তিতে ব্রোঞ্জের পরত দেন ভাস্কর বি কে গুরু।
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) রায়ের অপেক্ষায় স্থগিত ছিল নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ। কয়েকদিন আগে সর্বোচ্চ আদালত সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। প্রকল্পে সায় দিয়েছে ১৪ সদস্যের হেরিটেজ প্যানেলও। এরপরেই পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে ত্রিকোণাকৃতি আধুনিক নকশার নতুন সংসদ ভবনের কাজ। দিনরাত চলছে নির্মাণকার্য। কারণ হাতে সময় অত্যন্ত কম। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের বাদল অধিবেশন নতুন সংসদ ভবনেই করার টার্গেট নিয়েছেন মোদি। তাঁর অভিমত, প্রস্তাবিত নতুন সংসদ ভবন হবে আত্মনির্ভর ভারতের অন্যতম নির্দশন। এই প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় ৯৭১ কোটি টাকা।
নতুন ভবন নির্মাণে জায়গা করে দিতেই বর্তমান সংসদ ভবনের সামনে থাকা গান্ধী মূর্তি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দু’ একদিনের মধ্যেই বিশালাকার ওই মূর্তি ক্রেনে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। বসানো হবে সংসদ ভবনে লোকসভার স্পিকারের প্রবেশ-প্রস্থানের দরজার (তিন নম্বর গেট) সামনে ছত্রপতি শিবাজির মূর্তির বাঁদিকে। তার জন্য তৈরিও হয়ে গিয়েছে সিমেন্টের মঞ্চ। চলছে বাহারি ফুল, পাতা দিয়ে আশপাশ সাজানোর কাজ। গান্ধী মূর্তি (Gandhi Statue) সরানোয় সংসদ সদস্যদের আবেগে আঘাত বলেই অনেকের মত। অবশ্য কেবল গান্ধী মূর্তিই নয়, নতুন সংসদ ভবনকে জায়গা করে দিতে কৃষক নেতা দেবীলাল, পণ্ডিত পন্থ সহ সব মিলিয়ে ৯টি মূর্তি সরানো হবে।
নতুন সংসদ ভবন তৈরি হয়ে গেলে বর্তমান গোলাকার সংসদ ভবনটি পরিণত হবে সংগ্রহশালায়। ৯৪ বছর আগে ১৮ জানুয়ারি উদ্বোধন হয়েছিল বর্তমান ভবনটির। যেখানে বসত ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল। ১৯২১ সালে শুরু হয়ে ছ’ বছর ধরে যা তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ স্থপতি এডুইন লুটিয়েন্স এবং হার্বাট বেকারের নকশায়। পরে যা পরিণত স্বাধীন ভারতের আইন প্রণয়নের আঁতুড়ঘর, পার্লামেন্ট অব ইন্ডিয়া।