নন্দীগ্রামে আজ কী বার্তা মমতার, মুখিয়ে রাজ্যবাসী
নন্দীগ্রাম লড়াইয়ের, নন্দীগ্রামের মাটি আপসহীন সংগ্রামের, নন্দীগ্রামের মাটি নীতি-আদর্শকে আঁকড়ে থাকার। সেই মাটি যে ‘দলবদলু’দের সম্পত্তি নয়, আজ সোমবার তেখালির জনসভা থেকে তার প্রমাণই দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2021) প্রাক্কালে ‘দোদুল্যমান’ আর ‘সুবিধাবাদী’ অংশের দোলাচলের মাঝেই গত ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে জনসভা করার কথা ছিল মমতার। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম নেতা অখিল গিরি করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সেই সভা হয়নি। স্থানীয়স্তরে পালন করা হয় দিনটি। মাঝের ১০ দিনে নানাজনের নানা ‘আস্ফালন’ আর ‘মুছে দেওয়ার’ হুঙ্কারকে ধতর্ব্যের মধ্যে না এনে সুপ্রিমোর সভাকে ‘ঐতিহাসিক’ করার কাজে ঝাঁপিয়েছে জোড়াফুল শিবির। আজ, তেখালির মাঠে সেই ‘বৃত্ত’ সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র। তাঁর কথায়, জমির অধিকার রক্ষার আন্দোলনের পীঠস্থান নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে একজনই আপন, একজনই নেত্রী—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ জনতা সেটাই প্রমাণ করবে। তিন লক্ষ মানুষ আসবেন সেই সভায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। সৌমেনবাবুর কটাক্ষ, উন্নয়ন বনাম কুৎসার এই অসম লড়াইয়ে নন্দীগ্রাম যে তৃণমূল সুপ্রিমোর পাশেই রয়েছে, তার প্রমাণ পাবে ‘স্বঘোষিত’ ভূমিপুত্ররাও। নন্দীগ্রাম অভিযানের পর কাল, মঙ্গলবার জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ায় পদযাত্রা করবেন তৃণমূল (Trinamool) সুপ্রিমো। ‘পা বাড়ানো’ আর ‘পা বাড়িয়ে রাখা’ অংশের টানাপোড়নের মাঝে নেত্রীর সেই কর্মসূচি নিয়েও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তৃণমূল সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা।
রাজ্য মন্ত্রিসভার দীর্ঘদিনের সদস্য তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভা ভোটের মুখে নাম লিখিয়েছেন পদ্মশিবিরে। দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ‘অনাচার’ আর ‘অনিয়মের’। দুই মেদিনীপুর থেকে জোড়াফুলের পাঠ তুলে দেওয়ার পণ করেছেন সদ্য গেরুয়া চাপানো এই নেতা। অধিকারী পরিবারের আর এক সদস্য এখন দাদার হাত ধরে দলবদলু। প্রথমে দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের মাথা থেকে এবং পরে দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও, অধিকারী পরিবারের অভিভাবক প্রবীণ শিশিরবাবু এখনও ‘খাতায় কলমে’ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান। অধিকারী পরিবারকে নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হওয়ার গোড়ার পর্ব থেকে প্রথমে পা এবং পরে চোখের অসুস্থতা নিয়ে বিড়ম্বনায় শিশিরবাবু। জেলা তৃণমূলের নতুন সভাপতি সৌমেনবাবু তাঁকে নন্দীগ্রামের সভার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর আশীর্বাদও প্রার্থনা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘উনি (শিশিরবাবু) আমাদেরও অভিভাবক, পথপ্রদর্শক। এত বড় সভার জন্য তাঁর আশীর্বাদ তো চাই।’ তবে শিশিরবাবু থাকবেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। পরিবারের অপর সদস্য তমলুকের তৃণমূল এমপি দিব্যেন্দু অধিকারীর নির্বাচনী ক্ষেত্র এই নন্দীগ্রাম (Nandigram)। দিব্যেন্দুবাবু সভায় থাকবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তাও মেলেনি। এহেন পরিস্থিতিতে তৃণমূল সুপ্রিমোর নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করতে যে পর্যায়ের উন্মাদনা আর উৎসাহ নিয়ে সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা কোমর বেঁধে আসরে নেমেছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রবিবারও সভার সমর্থনে কাঁথি শহরে বড়সড় মিছিল করেছে জোড়াফুল শিবির।
রাজনীতির এই জটিল আবর্তনের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রের খবর, তেখালির সভার পরই পূর্ব মেদিনীপুরে দলের জেলা কমিটিকে ‘অধিকারী প্রভাবমুক্ত’ করার কাজ জোরকদমে শুরু হয়ে যাবে। তৃণমূলের লক্ষ্য এখন একটাই… একুশ।