রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

দলবদলু ঠেকিয়ে বিজেপি বাঁচাও, পথে আদিকর্মীরা

January 19, 2021 | 2 min read

ছবি : প্রতীকী

বিজেপির(BJP) কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে, দলবদলের সিদ্ধান্ত দিল্লির। আর সেটাই মেনে চলতে হবে। নেতারা শুনছেন। কিন্তু কর্মীরা? মানতে নারাজ তাঁরা। কারণ, মাঠে নেমে কাজ করতে হয় তাঁদের। লড়তে হয় তাঁদের। তাই অসন্তোষ এবার আছড়ে পড়ছে ‘যোগদান মেলা’ নিয়ে। সেই মেলার ভিড়ে শুধু নেতারা নয়, কয়লা মফিয়া থেকে গোরু পাচারকারী—ঢুকছে সবাই। ক্ষোভের আঁচ আর ছাইচাপা দেওয়া যাচ্ছে না। জমি আন্দোলনের ‘স্বঘোষিত কাণ্ডারী’ শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) ‘খাসতালুক’ নন্দীগ্রামে আদি বিজেপিদের ক্ষোভের মাত্রা বেশ চড়া। কারণ, তাঁর লেজুড় হিসেবে যাঁরা ‘যোগদান মেলায়’ বিজেপির পতাকা হাতে নিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই আম্পান কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তাই সেখানে রীতিমতো ফ্লেক্স বানিয়ে ‘দলবদলু’দের হাত থেকে বিজেপিকে বাঁচাতে আদিরা নেমেছেন রাস্তায়।
সোমবার নন্দীগ্রাম-২(Nandigram) ব্লকের আমদাবাদ-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুবদি বীণাপাণি বুথে আদি বিজেপি কর্মীরা রীতিমতো ফ্লেক্স তৈরি করে দলবদলুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেন। কারণ, ৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রাম-২ পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষ, এক পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী, এক উপপ্রধানের স্বামী সহ কিছু তৃণমূল নেেতা বিজেেপি যোtগ দিয়েছেন। তাঁদের জন্য আদি বিজেপিদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁরা ফ্লেক্সে ওই সব নেতার নাম ছাপিয়ে বিজেপি থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিজেপির বুথ সভাপতি নান্টু মাইতি বলেন, ‘যারা পঞ্চায়েতে আমাদের মনোনয়ন দিতে বাধা দিয়েছিল, তাদেরই আদর করে দলে নেওয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে গরিবের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, রেশন কেলেঙ্কারি, উম-পুন কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। তাই এই দলবদলুদের দু’দিনের মধ্যে বের করে না দিলে আমরা একযোগে বিজেপি ছাড়ব।’ তবে, বিজেপির জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘কোথাও কোথাও কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে। আমরা আলোচনায় বসে সমস্যা মেটাব।’
শুধু নন্দীগ্রামেই নয়, দুর্গাপুরেও দলবদলুদের নিয়ে বিজেপিতে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন এক কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিতেও বালুরঘাটের  সাংসদ  সুকান্ত মজুমদারের হাত ধরে পাচার কারবারে এক অভিযুক্ত বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় আদিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও তৃণমূলের দুই নেতাকে নিয়েও আদি-নব্যের বিভাজন স্পষ্ট। আদিদের অভিযোগ, জেলা কমিটিতে কোনও আলোচনা না করেই একের পর এক ‘মানুষের অপছন্দের’ নেতাকে যোগদান করানো হচ্ছে। পাচারকারীও বাদ যাচ্ছে না। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।
নব্যদের নিয়ে সমস্যার কথা অস্বীকার করতে পারেননি বিজেপির দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিনয় বর্মন। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের দু’জন নেতাকে নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। এখন মিটে গিয়েছে। তবে, পাচারচক্রে জড়িত কাউকে দলে নেওয়া নিয়ে কর্মীদের ক্ষোভ থাকলে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’
হলদিয়ায় শুভেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই দল ছেড়েছেন। তাঁদের বিজেপিতে যোগদান একপ্রকার নিশ্চিত ধরে নিয়েই ‘দলবদলু’দের দলে নেওয়া ঠেকাতে গেরুয়া শিবিরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কারণ কয়েকজন নেতা এলাকায় শ্রমিক বিরোধী এবং তোলাবাজ বলে পরিচিত। তাঁদের জন্যই গত নির্বাচনেও তৃণমূল হলদিয়ায় হেরেছিল।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও ‘দলবদলু’দের নিয়ে আদি বিজেপির মধ্যে ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। কারণ অধিকাংশ ‘দলবদলু’ তৃণমূল নেতার ভাবমূর্তি খুবই খারাপ। চন্দ্রকোণার ক্ষীরপাইয়ে গত ১৬ জানুয়ারি তৃণমূলের এক নেতা ও এক নেত্রী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সেই ‘দলবদলু’দের তাড়ানোর দাবিতে রবিবার রাতে বিজেপির ‘আদি’রা মণ্ডল অফিসে তালা লাগিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, না তাড়ালে অফিস খোলা হবে না।
মানুষ কিন্তু বলছে, ক্ষমতা দখলই বিজেপির লক্ষ্য। তাই নারদে অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারী, শোভন চট্টোপাধায় থেকে বেআইনি কয়লা কারবারে অভিযুক্ত রাজু ঝায়ের যোগদান। ফলে আদর্শের জন্য বিজেপিকে আঁকড়ে থাকা কর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। যতদিন ক্ষোভ কর্মীদের মনে জমে ছিল, ততদিন নেতারা ছিলেন বিন্দাস। কিন্তু এখন তার বিস্ফোরণ হচ্ছে। এখন নেতাদের অবস্থা? ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #tmc, #Bengal BJP

আরো দেখুন