অনন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! চমকে দেওয়ার মতো অজানা তথ্য
১. প্রতি বছর ছেলে এবং মেয়ের জন্মদিনে একটি করে কবিতা লিখে উপহার দিতেন সৌমিত্র। নিয়ম ছিল আগের রাতে ঘুমের সময় তাঁদের বালিশের নীচে কবিতাটি রেখে আসতেন বাবা।
২. আকাশবাণীর একটি মাত্র পদের জন্য অন্য দাবিদারদের সঙ্গে তিনি এবং অনিল চট্টোপাধ্যায় পরীক্ষা দেন। অনিলবাবু প্রথম স্থান অধিকার করেন, সৌমিত্রবাবু দ্বিতীয়। কিন্তু ঠিক সেই সময় অনিল চট্টোপাধ্যায় বাংলা ছবিতে অভিনয়ের ডাক পান। ফলে তিনি চাকরিটি নেন না। বদলে চাকরিটি পান সৌমিত্রবাবু।
৩. ‘অপুর সংসার’ ছবির হাত ধরে সিনেমায় যাত্রা শুরু হলেও, জীবনের প্রথম স্ক্রিনটেস্টে বাতিল হয়ে যান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯৫৭ সালে কার্তিক চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নীলাচলে মহাপ্রভু’ ছবির জন্য স্ক্রিনটেস্ট দিয়েছিলেন তিনি। পরে সেই ছবিতে চৈতন্যদেবের ভূমিকায় অভিনয় করেন অসীম কুমার।
৪. কলেজ জীবনের শেষ বছর মঞ্চে শিশির ভাদুড়ির অভিনয় দেখেই এই শিল্পে আসার সিদ্ধান্ত নেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শিশিরবাবু ১৯৫৯ সালে মারা যাওয়ার আগে তাঁর দলে ছোট চরিত্রে কাজও করে ফেলেছিলেন তিনি।
৫. সিটি কলেজে পড়ার সময় সান্নিধ্যে আসেন সাহিত্যিক এবং অধ্যাপক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের। টেনিদার স্রষ্টা সৌমিত্রবাবুকে পরামর্শ দেন নাটকে অভিনয় করার। পরে সাক্ষাৎকারে সৌমিত্রবাবু বলেছিলেন, তাঁর অভিনয় জীবনের পিছনে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের বড় ভূমিকার কথা।
৬. ১৯৫৮ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘জলসাঘর’ ছবির শুটিংয়ে পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার আগে মাত্র কয়েক বার দেখা হলেও কাজের সুযোগের বিষয়ে কোনও কথা হয়নি তাঁদের মধ্যে। ‘জলসাঘর’ ছবির সেটে সত্যজিৎ রায় তাঁর সঙ্গে ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন এই বলে, ‘এই হল সৌমিত্র। আমার পরের ছবিতে ও অপু হচ্ছে।’ গোটা ঘটনাটাই বিস্ময়ের মতো সৌমিত্রবাবুর সামনে আসে।
৭. ‘চারুলতা’ ছবিতে তাঁর হাতের লেখার বেশ কয়েকটি শট থাকবে বলেছলেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু নিজের হাতের লেখায় হবে না। ঊনবিংশ শতকের হাতের লেখার তিনটি স্যাম্পেল সৌমিত্রবাবুকে দেন সত্যজিৎ রায়। তিন মাস সেই হাতের লেখা অভ্যাস করেছিলেন তিনি। ছবির শুটিং শেষ হওয়ার পর আয়ত্ত করা হাতের লেখা ভুলে নিজের আসল হাতের লেখায় ফিরে আসতে তাঁর আরও ছ’মাস লেগে যায়।
৮. সিনেমায় যাত্রা শুরুর পরে দীর্ঘদিন মঞ্চকে সময় দিতে পারেননি তিনি। ‘অপুর সংসার’ ছবির প্রায় ২০ বছর পর ১৯৭৮ সালে আবার মঞ্চে ফেরেন তিনি। নিজের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ করেন ‘নাম জীবন’ নাটকটি।
৯. সত্যজিৎ রায় যখন ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ বানানোর সিদ্ধান্ত নেন, সৌমিত্রবাবু ভেবেছিলেন, গুপীর চরিত্রে তাঁকেই নির্বাচন করবেন পরিচালক। কিন্তু তা হয়নি। শেষমেশ নিজেই বলেন সে কথা। মাণিকবাবু বলেন, গুপীর চরিত্রে যে গ্রাম্যতা আছে, পর্দায় সৌমিত্রবাবুর চেহারায় তা দেখা যাবে না। পরে অভিনেতা বলেছিলেন, তপেন চট্টোপাধ্যায়কে দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, সত্যিই গুপীর জন্য তিনি বেমানান ছিলেন। তপেনবাবুই ছিলেন আদর্শ।
১০. জীবনে একটি মাত্র ছবি পরিচালনা করেন। নাম ‘স্ত্রী কা পত্র’। ১৯৮৬ সালের এই হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এবং ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়।
১১. ২০০১ সালে ‘দেখা’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। কিন্তু তিনি মনে করেছিলেন, বহু আগেই তাঁর জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। তাই প্রতিবাদ হিসেবে তিনি সেই পুরস্কার নিতে চাননি। জীবনে কখনও জাতীয় পুরস্কারও পাননি তিনি। অথচ ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান লিজিয়ঁ দ্য’ন্যর পেয়েছেন এই অভিনেতা।
১২. নিজের পত্রিকার নামকরণ করার জন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অনুরোধ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের কাছে। মাণিকবাবু সেই পত্রিকার নাম রাখেন ‘এক্ষণ’। শুধু তাই নয়, তিনি সেই পত্রিকার প্রচ্ছদও এঁকে দিয়েছিলেন। সৌমিত্রবাবুর সেই পত্রিকায় সত্যজিৎ রায়ের বেশ কয়েকটি চিত্রনাট্যও ছাপা হয়।
তথ্য: সুমন রায়