দেশ বিভাগে ফিরে যান

এনআরসি – অসমে বিজেপিকে বিরাট ধাক্কা দিল নির্বাচন কমিশন

January 21, 2021 | 2 min read

নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের সাধের এনআরসি (NRC) জুজুতে জল ঢেলে দিল খোদ নির্বাচন কমিশন। বুধবার তারা জানিয়ে দিয়েছে, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস অর্থাৎ এনআরসিতে নাম বাদ গেলেও সে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই ভোট দেওয়া যাবে। অসমে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কমিশনের প্রতিনিধি দল সেই রাজ্য পরিদর্শন করেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে রাজ্য প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠকও ছিল। তার পরই সাংবাদিকদের সামনে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এনআরসিতে নাম নেই, অথচ ভোটার তালিকায় আছে, এমন ব্যক্তিরা অসমে ভোট দিতে পারবেন। কমিশনের এই ঘোষণায় চূড়ান্ত বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এনআরসি এবং ভোটার কার্ড, তাহলে কোনটি নাগরিকত্বের প্রমাণ? ভোটার কার্ড ও ভোটার তালিকায় (Voter List) নাম থাকলেই যদি ভোট দেওয়া যায়, তার মানে তো রাষ্ট্র নাগরিকত্ব স্বীকার করে নিচ্ছে! এনআরসির আর প্রয়োজন কী? যদিও সরকারি সূত্রে এই প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, এনআরসিতে অন্তর্ভুক্তির সব সুযোগ যদি শেষ হয়ে যায়, তখনই নাম বাদ যাবে ভোটার তালিকা থেকে।

গত দু’বছর ধরে মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এনআরসি নিয়ে উচ্চগ্রামে প্রচার করে চলেছে। বারংবার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, অনুপ্রবেশকারী ও বেআইনি নাগরিকদের ভারতছাড়া করতে এবার এই প্রথম কোনও সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে চলেছে। হাতিয়ার হবে এনআরসি। বস্তুত করোনা (Coronavirus) সংক্রমণ ভারতে আঘাত করার আগে পর্যন্ত সবথেকে জ্বলন্ত রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে দেশের নানা প্রান্তে আছড়ে পড়েছিল এনআরসি এবং সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (CAA)। সে নিয়ে বিতর্ক, বিক্ষোভ, আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল একের পর এক রাজ্য। দেশের বিভিন্ন শহর চেহারা নিয়েছিল দিল্লির শাহিনবাগের। করোনকাল সেই ইস্যুকে পিছনে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু ২০২১ সালে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে আবার বিজেপি ও মোদি সরকার ফিরিয়ে এনেছে এনআরসি জুজু। পশ্চিমবঙ্গে এসে স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি জানিয়েছেন, এনআরসি হবেই। ঠিক এমন একটা আবহে নির্বাচন কমিশন বুধবার গুয়াহাটিতে জানিয়েছে, যতক্ষণ ভোটার তালিকায় কারও নাম আছে, ততক্ষণ ভোটাধিকারও আছে। সুতরাং এনআরসিতে নাম না থাকলেও ভোটার তালিকায় যদি নাম থেকে যায়, তাহলে ভোট দিতে বাধা নেই। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে এনআরসি নাগরিকত্বের এক ও একমাত্র প্রমাণ হয় কীভাবে? সরকারি সূত্রে অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে আদৌ বিভ্রান্তি বলে মনেই করা হচ্ছে না।

সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, এনআরসিতে নাম বাদ গেলে তাকে চ্যালেঞ্জ করে আইনি পদক্ষেপ কেউ নিতেই পারে। প্রথমে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল, তারপর উচ্চ আদালত। যতক্ষণ না এই আবেদনের নিষ্পত্তি হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁর কোনও নথিকে বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। সেই জন্যই নির্বাচন কমিশন বলেছে, যতক্ষণ না কারও ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ চলে যাচ্ছে, ততক্ষণ সে ভোটার। অর্থাৎ কমিশনের (Election Commission of India) ঘোষণা অনুযায়ী, এনআরসিতে নাম না থাকায় যাঁরা ইতিমধ্যেই ট্রাইব্যুনাল অথবা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, তাঁরা এই প্রক্রিয়া চলাকালীন ভোট দিতেই পারবেন। অবশ্যই যদি তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় থাকে। কিন্তু সব সুযোগ শেষ হওয়ার পরও যদি কেউ উপযুক্ত প্রমাণ দিতে না পারেন, তাহলে ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ চলে যাবে। তখন থেকে তিনি বেআইনি নাগরিক। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে হলে কিন্তু একটি নোটিস পাঠাতে হয়। কোনও নাগরিককে আচমকা ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না। এনআরসি কিন্তু তা নয়। যদিও সমীকরণ এতটাও আর সহজ থাকল না। বুধবার কমিশনের ঘোষণা নতুন জল্পনার জন্ম দিল এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#assam, #Voter list, #NRC

আরো দেখুন