এবার ভোটে নিষিদ্ধ হচ্ছে বাইক র্যালি
বিধানসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী(Central Force) নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা যেন রাজ্য পুলিসের(State Police) হাতে না থাকে—বেশ কিছুদিন ধরেই এই দাবি তুলছে বঙ্গ-বিজেপি(Bengal BJP)। শুক্রবার তা নস্যাৎ করে দিল নির্বাচন কমিশন(Election Commission Of India)। স্পষ্ট জানাল, কেন্দ্র-রাজ্য নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমেই কাজ করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অর্থাৎ, সুষ্ঠুভাবে ভোট পরিচলনায় যৌথ সম্পর্ককেই গুরুত্ব দিতে চাইছে কমিশন। সে ক্ষেত্রে কোনও পক্ষের হাতেই বাহিনীকে একতরফা নিয়ন্ত্রণের ভার ছেড়ে দিতে নারাজ তারা। প্রতিটি বুথে বাহিনী মোতায়েন থেকে শুরু করে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পারস্পারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। এদিন ভোটের প্রস্তুতি পর্বে কলকাতায় প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। সেখানেই বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন তিনি।
সাধারণত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জেলাশাসক, পুলিস সুপার এবং পর্যবেক্ষকের বৈঠকে। স্থানীয় থানাই পথ চিনিয়ে নিয়ে যায় বাহিনীর জওয়ানদের। এই সিস্টেমের পরিবর্তন চেয়েছিল বিজেপি। বাহিনী মোতায়েনের ক্ষমতা রাজ্য পুলিসের হাত থেকে নিয়ে নেওয়া উচিত বলে মত তাদের। শুধু তাই নয়, এখন থেকেই আধা সামরিক বাহিনীকে নামানোর দাবি তুলেছিলেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ভোটের আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে। তবে তিন মাস আগে কোনওভাবেই নয়। রাজ্যের মেশিনারিকে সঙ্গে নিয়ে ভোট করতে হবে। কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় রেখেই বাহিনী মোতায়েন হবে।’ প্রসঙ্গত, এই মোতায়নের প্রশ্নে ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে চেয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ‘মউ’ করতে চেয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তাতে তীব্র আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে নবান্ন।
রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে আগেই উষ্মা প্রকাশ করেছিল কমিশন। এদিনও সেই বিষয়টি সামনে এনে পুলিস-প্রশাসনকে ফের সতর্ক করে দিয়েছেন অরোরা। বলেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার উপর আমাদের কড়া নজর রয়েছে।’ শুধু তাই নয়, গোলমাল এড়াতে এবার বাইক মিছিলও চায় না কমিশন। আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পরই এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। গত ছ’মাসের রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনাগুলি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে কমিশন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের আশ্বাস দিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘পেশি ও অর্থশক্তিকে কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’ নজরদারি করতে তিন ধরনের পর্যবেক্ষক আসবেন। সাধারণ, আইনশৃঙ্খলা ও ব্যয় সংক্রান্ত পর্যবেক্ষক। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কমিশন।
ভোটের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বুধবার সন্ধ্যায় রাজ্যে আসেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সহ কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সব জেলাশাসক, পুলিস সুপার, পুলিস কমিশনার, আয়কর সহ রেগুলেটরি এজেন্সি, মুখ্যসচিব সহ রাজ্য সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। এদিন বিকেলে দিল্লি ফিরে যান তাঁরা। সঙ্গে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। আজ শনিবার বিকেলে দিল্লিতে একপ্রস্থ বৈঠকে বসবে কমিশন। জানা গিয়েছে, সেখানে রাজ্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার নির্যাস নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। ভোটের নির্ঘণ্ট নিয়েও অলোচনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনুমান করা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দিন খুব শীঘ্রই ঘোষণা করতে পারে কমিশন।
রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে দু’দিনের বৈঠক সম্পর্কে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘মুখ্যসচিব করোনা নিয়ে যে রিপোর্ট পেশ করেছেন, তা খুব ভালো। আমরা সব বুথ একতলায় করব। কোভিডের কারণে বুথ পিছু এবার ভোটারের সংখ্যা এক হাজার থাকবে। ফলে ২২ হাজারের বেশি বুথ বাড়বে। সে ব্যাপারে মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কয়েকজন জেলাশাসকও ‘আউটস্ট্যান্ডিং রিপোর্ট’ দিয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য হল, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট।’
তবে এবারের ভোটের কোনও কাজে গ্রিন পুলিস ও সিভিক ভলান্টিয়ারকে ব্যবহার করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত লোকসভা ভোটে কয়েকজন আইএএস, আইপিএস অফিসারকে অপসারণ করা হয়েছিল। এবার তার পুনরাবৃত্তি চাই না।’ সেটাও জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও বিএসএফের বিরুদ্ধে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ নিয়ে সুনীল অরোরা বলেন, ‘এই অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক।’ পাশাপাশি ভোটার তালিকায় ৫ লক্ষ রোহিঙ্গার নাম রয়েছে বলে দিলীপ ঘোষের অভিযোগকেও খারিজ করে দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার চাইলেই সিইও বা কমিশনের সঙ্গে যুক্ত কোনও অফিসারকে বদলি করতে পারবে না। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের একটি স্পষ্ট গাইডলাইন রয়েছে।