নেতাজির অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক স্লোগান, নিন্দায় সরব সোশ্যাল মিডিয়া
চূড়ান্ত অপমান করা হয়েছে। শুধু মুখ্যমন্ত্রী নয়, বাংলাকেও। সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান নিয়ে নিন্দার ঝড় সর্বত্র। রাজনৈতিক মহল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। যাঁরা বাংলা দখলের কথা বলছেন, তাঁরা সংস্কৃতি-শিষ্ঠাচার জানেন না, সেই বার্তাটা সামনে এসেছে। এই ঘটনার পর বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ আরও বাড়বে, তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।
শনিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান ছিল। সরকারি এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Natrndra Modi), রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার (Jagdeep Dhankar), মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সচিবরা হাজির ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখার ঠিক আগেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উঠে আসে দর্শকদের মধ্যে থেকে। যে ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। কোনও বক্তব্য না রেখে শুধমাত্র প্রতিবাদ জানিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান। জানিয়ে দেন, এটা সরকারি অনুষ্ঠান, দলের নয়।
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রতিবাদ যথার্থ ও সময়োচিত বলে উল্লেখ করেছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপির সমর্থকরা ওই স্লোগান দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানের পর দেখা গিয়েছে, বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, রামের প্রতি ভক্তি দেখানো হয়নি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমানিত করার চেষ্টা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ফলে তাঁকে অপমান আমাদের গায়ে লাগবে। বিরোধী রাজনীতি করলেও মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যদাকে সকলের সম্মান জানানো উচিত। বাংলার সংস্কৃতির অপমান করা হয়েছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও প্রতিবাদে সরব।
তাঁর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কার্যত রাজ্যবাসীকে অসম্মানিত করা হয়েছে। সরকারি অনুষ্ঠানকে দলীয় অনুষ্ঠানে পরিণত করা বিজেপির এই অসভ্যতার তীব্র নিন্দা করছি। নেতাজির ভাবধারাকে কলুষিত করার চেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই। একইসুরে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, সরকারি অনুষ্ঠানে ওই স্লোগান দৃষ্টিকটূ।
এই ঘটনা বিজেপি নেতা শমিক ভট্টাচার্যও সমর্থন করেননি। বরং প্রতিবাদের আওয়াজ তাঁর কণ্ঠেও ধরা পড়েছে। তিনি বলেছেন, সমর্থনযোগ্য নয়। দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক, কাঙ্খিত নয়। মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব রাজনৈতিক উচ্চতা আছে, তাঁর বক্তব্য সকলে শোনবার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু মানুষজন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে পারলেন না। তবে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ট্যুইট করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়েও নিন্দা সর্বত্র। কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, জয় শ্রীরাম স্লোগানে স্বাগত জানানোকে মমতা অপমান বলে মানেন। এ কেমন রাজনীতি!
দেখা গিয়েছে, অনুষ্ঠানের পর থেকেই রাজ্যের শাসক দলের নেতৃত্ব বিজেপিকে বিঁধতে দেরি করেনি। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সমগ্র জাতির পক্ষে লজ্জাজনক। বাংলা, বাঙালিকে অপমানিত করেছে বিজেপি। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, শিষ্টাচার কাউকে শেখানো যায় না। এদের (বিজেপি) তো নয়ই। বিজেপি সংস্কৃতি বিরোধী তা বারবার প্রমাণ দিচ্ছে। সাংসদ নুসরত জাহান বলেছেন, রাম নাম গলা জড়িয়ে বলুন। গলা টিপে নয়। একইসঙ্গে তৃণমূল বলেছে, বিজেপি বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে, বিশ্বকবির ছবি নীচে নামিয়ে দিয়েছে। মনীষীদের সম্পর্কে ভুল তথ্য দিচ্ছে। বাংলা সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। আর এবার নেতাজির অনুষ্ঠানকেও কালিমালিপ্ত করল। দেখা গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও নানা ধরনের ঘটনা, বক্তব্য, ছবি তুলে ধরে বিজেপি বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছে রাজ্যবাসী।