এবার রেশন গ্রাহকের তথ্য যাচাই করবে রাজ্য
যে রেশন (Ration) গ্রাহকদের আধার ও মোবাইল নথিভুক্ত হয়েছে, তা রেশন দোকানের ইলেক্ট্রনিক পয়েন্ট অব সেলস (e- Pos) যন্ত্রে যাচাই করতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করল খাদ্যদপ্তর। তবে ওই নির্দেশিকায় একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, কোনও কারণে যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলেও কোনও রেশন গ্রাহককে খাদ্য থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ই-পস যন্ত্রে ডিজিটাল রেশন কার্ড স্ক্যান করে খাদ্য দেওয়ার কাজ অনেকদিন ধরে রাজ্যে চলছে। তবে আধার বা মোবাইল নম্বর যাচাই এখনও শুরু হয়নি। রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে এখন এটা দ্রুত চালু করতে চাইছে খাদ্যদপ্তর। তবে যাচাই প্রক্রিয়া করতে গিয়ে কোনও রেশন গ্রাহক যাতে খাদ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয় সেটাও দেখা হচ্ছে।
ই-পস যন্ত্রে আধার নম্বর যাচাইয়ের কাজ আঙুলের ছাপ দিয়ে করতে হয়। আঙুলের ছাপ দিয়ে রেশন গ্রাহকের পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হবে। রেশন কার্ড ই-পস যন্ত্রে স্ক্যান করলে গ্রাহকের নথিভুক্ত মোবাইল নম্বরে ওটিপি আসবে। রেশন ডিলার তখন ওটিপি নম্বরটি ই-পস যন্ত্রে টাইপ করলে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। খাদ্যদপ্তর এর মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, প্রকৃত রেশন গ্রাহক খাদ্য সংগ্রহ করলেন। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১০ কোটির কিছু বেশি ডিজিটাল রেশন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
কিন্তু গত বছরের শেষ দিক পর্যন্ত প্রায় ৭ কোটি রেশন গ্রাহকের আধার নম্বর খাদ্যদপ্তরের ডেটাবেসে নথিভুক্ত হয়েছে। খাদ্যদপ্তর গ্রাহকদের আধার নম্বর ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। রেশন কার্ডের জন্য নতুন আবেদন করার সময় ফর্মে গ্রাহকদের আধার ও মোবাইল নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফর্মের সঙ্গে আধার কার্ডের ফটোকপি জমা নেওয়া হয়েছে। আগে যাঁরা ডিজিটাল রেশন কার্ড পেয়ে গিয়েছেন, তাঁদের আধার ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ ১১ নম্বর ফর্ম তৈরি করা হয়েছে। ওই ফর্ম যাতে গ্রাহকরা সহজে পেতে পারেন, তার জন্য রেশন দোকানে রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। খাদ্যদপ্তরের স্থানীয় রেশন অফিস ছাড়াও দুয়ারে সরকার কর্মসূচির ক্যাম্পে গিয়েও ১১ নম্বর ফর্ম জমা দেওয়া যাচ্ছে।
আধার-মোবাইল নম্বর যাচাই করার জন্য খাদ্যদপ্তর যে নির্দেশিকা জারি করেছে, তা নিয়ে রেশন ডিলারদের সংগঠন ক্ষুব্ধ। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থায় ডিলারদের সমস্যায় পড়তে হবে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। একদিকে আধার, মোবাইল নম্বর যাচাই করতে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে যাচাই প্রক্রিয়া কোনও কারণে সম্পন্ন না হলেও খাদ্য দিতে হবে, এটাও বলা হচ্ছে। যাচাই না হলে কী ব্যবস্থায় খাদ্য দেওয়া হবে, তা জানতে চাওয়া হবে দপ্তরের কাছ থেকে।
খাদ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ই-পস যন্ত্রে যাচাই না হওয়া রেশন গ্রাহকদের কীভাবে খাদ্য দেওয়া হবে, তার একটা নীতি তৈরি করা হবে। খাদ্যদপ্তর যে নতুন কন্ট্রোল অর্ডার তৈরি করেছে, তাতে আধার নম্বর নথিভুক্ত না থাকলে, সেই রেশন গ্রাহককে খাদ্য দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বিধানসভার ভোটের আগে এই ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে না দপ্তর। তবে একই সঙ্গে রেশনের জন্য সরবরাহ করা খাদ্য যাতে বাইরে পাচার হওয়া আটকাতে কড়া হতে চাইছে দপ্তর। তাই আপাতত মাঝামাঝি একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে রেশন ডিলারদের ই-পস যন্ত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ব্যবহার না করলে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা ও মাসে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নিয়ম চালু হয়েছে।