‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে বিপাকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব
ভিক্টোরিয়ায় নেতাজির জন্মজয়ন্তীর সরকারি অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান বিতর্কে এবার নড়েচড়ে বসল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের দাবি, এই ঘটনায় শনিবার ঘনিষ্ঠ পরিসরে খেদের কথা জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। ভিক্টোরিয়ার ঘটনা ‘বাঙালি সেন্টিমেন্ট’কে আঘাত করেছে— এই হল গেরুয়া শিবিরের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ। যদিও তাদের দলীয় লাইন হল, মমতা শ্রীরামচন্দ্রের নাম শুনলে যেহেতু রেগে যান, তাই সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম— সর্বত্রই ওই ‘ধ্বনি’ উচ্চারণ করবেন নেতা-কর্মীরা। দেশের ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’র বুকে সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ছোঁড়া এই স্লোগান সংস্কৃতি মনস্ক বাঙালি ভালোভাবে নেয়নি বলেই দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছেন উদ্বিগ্ন শাহ-নাড্ডারা। সূত্রের দাবি, রবিবার শিলিগুড়িতে বিজেপির ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট কমিটির সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের। কিন্তু অজানা কারণে তিনি এদিন উত্তরবঙ্গে আসেননি। যদিও সেখানে ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশরা। সূত্রের দাবি, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং অমিত শাহের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ইস্যুতে কথা হয়েছে সন্তোষের। গোটা ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির অন্দরের খবর, বঙ্গ ভোটের আগে ভিক্টোরিয়ার ঘটনায় মমতার সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক আরও মজবুত হল। মিম, আব্বাস সিদ্দিকি সহ একাধিক নেতাকে মাঠে নামিয়ে ওই ভোট বাক্সে ফাটল ধরানোর যে কৌশল বিজেপি (BJP) নিয়েছে, তা মাঠে মারা গেল।
ভিক্টোরিয়া (Victoria) প্রাঙ্গণে প্রবেশের ‘পাস’ বিলি নিয়ে দলের অন্দরে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই অনুষ্ঠানস্থলে যত চেয়ার ছিল, তার থেকে লোক ঢুকেছিল অনেক বেশি। প্রশ্ন উঠছে, স্পেশাল প্রোকেটশন গ্রুপের (এসপিজি) নজরদারি এড়িয়ে ও কলকাতা পুলিসের বজ্রআঁটুনি ভেঙে কীভাবে এত লোক ভিক্টোরিয়ায় ঢুকে পড়ল? যা নিয়ে দিল্লির তরফেও কৈফিয়ত চাইতে পারে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে বিজেপিকে গোছা গোছা কার্ড দেওয়া হয়েছিল। তা সঠিকভাবে বিলি হয়নি। যদিও তৃণমূল (Trinamool) কিংবা অন্য দল থেকে বিজেপিতে আসা নেতাদের অনেককেই ভিভিআইপি’দের পাশে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। ওই নেতা বলেন, তৃণমূলের এক প্রাক্তন নেতা এবং তাঁর অনুগামীরা শনিবার ভিক্টোরিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সভাস্থলে ঢুকে যাওয়ার পরেও বাইরে থেকে প্রচুর লোক ঢুকিয়েছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে বিজেপি’র আদি নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ ভিক্টোরিয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ। এদিকে, গত ২১ জানুয়ারি পূর্ব বর্ধমানে বিজেপি’র পার্টি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করল দল। রবিবার জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী সহ ১৪ জন দলীয় নেতা-কর্মীকে শো’কজ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সাতদিনের মধ্যে উপযুক্ত জবাব দিতে বলা হয়েছে। দল তাতে সন্তুষ্ট না হলে আগামিদিনে অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে।